বাড়ন্ত শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অভিভাবকদের একটু বাড়তি খেয়াল রাখতেই হয়। তবে শিশুর বৃদ্ধির সময় অভিভাবক হিসেবে যেকোনো কিছু নিয়ে ভাবনায় পড়লে একজন শিশুবিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া ভালো। কারণ, শিশুদের এমন কিছু সমস্যা হতে পারে, যা নির্দিষ্ট বয়সের পর আর সমাধান করা সম্ভব হয় না। উচ্চতার ব্যাপারটাও তা-ই। কোনো ঘাটতির কারণে যদি উচ্চতা না বাড়ে, তাহলে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সেই ঘাটতি পূরণ করা হলেও উচ্চতা আর বাড়ে না।
শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই উপাদানগুলো দিতে হয় সঠিক পরিমাণে, সঠিক অনুপাতে। তবে এর বাইরেও অন্য দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে শিশুর উচ্চতা। একটি হলো জিনগত বৈশিষ্ট্য, অন্যটি হরমোন। জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা সম্ভব না। শিশুর মা-বাবা কিংবা তাঁদের পরিবারের অন্য কারও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শিশুর বৈশিষ্ট্যের মিল থাকতে পারে। একই মা-বাবার সব সন্তানের উচ্চতা একই রকম না-ও হতে পারে। এর ওপর আসলে কারও হাত নেই। হরমোন ও পুষ্টির দিক ঠিকঠাক থাকলেও কেবল এই কারণে শিশুর উচ্চতা কম হতে পারে। আবার শিশুর বেশ ভালো উচ্চতার জিন থাকা সত্ত্বেও হরমোন বা পুষ্টিজনিত ঘাটতিতে উচ্চতা কম হতে পারে, এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট তাসনুভা খান।
শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করতে আমিষজাতীয় খাবার আবশ্যক। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, নানান ধরনের ভিটামিন এবং ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবারও দিতে হবে। তবে কোন খাবারে কোন উপাদান বেশি থাকে, তার বিশাল কোনো তালিকা নিয়ে বসতে হবে না আপনাকে। বরং কোন ধরনের খাবার দিতে হবে, তা জেনে নিন। খাবারের বাইরেও শিশুর উচ্চতা বাড়াতে তার স্বাভাবিক জীবনধারার কোন কোন দিক নিশ্চিত করতে হবে, সেটিও জেনে নিন।
খাবারদাবার
দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার শিশুর জন্য খুবই দরকারি। অনেক শিশুই দুধ খেতে চায় না। এমন ক্ষেত্রে জোরাজুরি করে দুধ খাইয়ে দুধের প্রতি তার অনীহা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। শিশুকে বরং দুধের তৈরি মজাদার খাবার দিন। পনির, দই এবং নানা রকম মিষ্টান্ন তৈরি করে দিতে পারেন। এক গ্লাস দুধ না খেলেও সেইটুকু দুধের তৈরি পায়েস খেতে অনেক শিশুই আপত্তি করবে না।
মাছ ও মাংস দুটিই শিশুর প্রয়োজন। মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ডিম ও ডালও দিতে হবে।
প্রচুর শাকসবজি খেতে দিন। সবজি রান্না খেতে না চাইলে সবজি-নুডলস করে দিন। সবজির পাকোড়া, সবজির কাটলেট, সবজির বার্গার, সবজির স্যান্ডউইচ অনেক কিছুই বানিয়ে দিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, অনেক পানি দিয়ে সবজি সেদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান হারিয়ে যাবে। তা ছাড়া সবজি রান্না বা সেদ্ধ করার সময় ঢেকে না দিলেও অনেক পুষ্টি উপাদান বাষ্পের সঙ্গে উড়ে যায়।
সবজি খাওয়ার সময় কিংবা সবজি খাওয়ার পরে টক ফল খাওয়া ভালো। কারণ, সবজির মধ্যে থাকা আয়রন মানবদেহের কাজে আসার জন্য ভিটামিন সি প্রয়োজন। তবে আচার কিন্তু ভিটামিন সির উৎস নয়। কারণ, তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়।
অন্যান্য ফলমূলও খেতে হবে রোজ। কলা ও খেজুর নানান রকম পুষ্টি উপাদানের দারুণ উৎস। মৌসুমি ফলও দিন শিশুকে। ফলের রসও দিতে পারেন।
আরও যা
শিশুকে দৌড়ঝাঁপ এবং হুটোপুটি করতে দিন। সারা দিন ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে বসে থাকতে দেবেন না। প্রয়োজনে নিজেই ওর সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করুন বা খেলুন। এভাবে শিশুর শরীরচর্চা হবে। সাইকেল চালানো দারুণ ব্যায়াম। রোদে যেতে উৎসাহ দিন, যাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় শিশু। খাবারের ক্যালসিয়াম দেহের কাজে লাগার জন্য কিন্তু ভিটামিন ডি আবশ্যক।
শেষ কথা
মনে রাখবেন, একই বয়সী সব শিশু একই সময়ে একইভাবে বাড়বে না। সবকিছুর পরও যদি আপনার মনে হয়, শিশুর উচ্চতা কম, তাহলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করবেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন।