মাসল ক্র্যাম্প থেকে বাঁচার উপায়

মাসল ক্র্যাম্প হচ্ছে মাংসপেশির ব্যথাযুক্ত সংকোচন বা মাংসপেশি হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়া, যা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। এটি সাধারণত পায়ের মাংসপেশিতে হয়ে থাকে। রাতে সাধারণত পায়ের ডিম বা কাফ মাসল হঠাৎ সংকুচিত বা শক্ত হয়ে যায়। কিছুতেই আর পা সোজা করা যায় না। কখনো কখনো ঊরু বা পায়ের পাতার পেশি সংকুচিত হতে পারে। ঘুমের মধ্যে তো বটেই, জেগে থাকা অবস্থায়ও এমনটা হতে পারে।

মাসল ক্র্যাম্প কেন

অনেক কারণে মাসল ক্র্যাম্প হতে পারে। যেমন ব্যায়াম, আঘাত বা পেশির অত্যধিক ব্যবহার। নারীদের গর্ভাবস্থায় খনিজের পরিমাণ কমে গেলে ক্র্যাম্প হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ মাসগুলোয় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে, বিশেষ করে ঠান্ডা পানি লাগালে এটি হয়।

অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন রক্ত চলাচল সমস্যা (প্রান্তিক ধমনির অসুখ), কিডনি রোগ, থাইরয়েডের রোগ ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস। দীর্ঘ সময় শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা, ঘুমের মধ্যে দুই পা বেঢপ ভঙ্গিতে রাখা, রক্তে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম কিংবা অন্য খনিজ না থাকা এবং পানিস্বল্পতায় ভোগা। শরীর থেকে প্রচুর তরল ক্ষয় বা পানিশূন্যতা। কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন মানসিক রোগের ওষুধ, জন্মনিরোধক বড়ি, ডাইইউরেটিকস, স্ট্যাটিন ও স্টেরয়েড গ্রহণ।

মাসল ক্র্যাম্প যেভাবে এড়াবেন

হঠাৎ মাসল ক্র্যাম্প শুরু হলে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। যেমন মাংসপেশি প্রসারিত ও ম্যাসাজ করুন। পেশি স্বাভাবিক রাখতে গরম পানিতে গোসল করুন বা সংকুচিত পেশিতে গরম পানি ঢালুন। পেশিতে গরম প্যাড রাখলেও উপকার মেলে। কাপড়ে বরফ বেঁধে ব্যবহার করা যায়।

প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন খেতে পারেন। তবে ওষুধ খাওয়ায় সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসক মাসল ক্র্যাম্পের ব্যবস্থাপত্র দিলে, তা মেনে চলুন। বেশি বেশি পানি পান করুন।

পরামর্শ

কাছাকাছি জায়গায় হাঁটুন অথবা পায়ে ঝাঁকি দিন। কাফ মাসল প্রসারিত করুন। বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় এটি করতে পারেন। বসে থাকলে পা সোজা করুন এবং পায়ের আঙুলগুলো ওপরের দিকে রেখে পাতা বাঁকিয়ে হাঁটুর দিকে আনুন। এ ক্ষেত্রে পায়ের তলায় একটি তোয়ালে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু সোজা রেখে তোয়ালের দুই প্রান্ত ধরে আস্তে আস্তে নিজের দিকে টানুন। দাঁড়ালে, দেয়াল থেকে দুই ফুট দূরে দাঁড়ান। দেয়ালের দিকে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান। আক্রান্ত পায়ের হাঁটু সোজা রাখুন এবং গোড়ালি মাটিতে রাখুন। এ সময় অন্য পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে রাখুন।

  • অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, ভাইস প্রিন্সিপাল, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল