চিনি হলো একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি। অনাদিকাল থেকে খাদ্যের আকর্ষণীয় উপাদান এটি। তবে স্বাস্থ্যের জন্য সাদা চিনি ভালো নয়। কারণ, বেশি প্রক্রিয়াকরণের কারণে সাদা চিনিতে ক্যালরি ছাড়া অন্য কোনো খনিজ উপাদান নেই। ডাক্তারেরা চিনিকে হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ বলে থাকেন। চিনি দ্রুত রক্তে মিশে রক্তে শর্করার মাত্রা যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমনি ওজন বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে।
এবার আসি গুড়ের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলাপে। সাধারণত আখের রস বা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ ছাড়া তালের রস থেকেও গুড় তৈরি হয়। ১০০ গ্রাম গুড়ে প্রায় ৭০ গ্রাম সুক্রোজ (আখ ও বিট থেকে প্রাপ্ত চিনির পারিভাষিক নাম) থাকে যেখানে একই পরিমাণ চিনিতে থাকে ৯৯ গ্রাম। এ ছাড়া গুড়ে প্রায় ৩৮৩ ক্যালরি, ফ্রুক্টোজ ১০ গ্রাম, প্রোটিন ০ দশমিক ৪ গ্রাম, চর্বি বা ফ্যাট শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, আয়রন ১১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৭০-৯০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১ দশমিক ৫৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফসফরাস ও কপার থাকে।
চিনি ও গুড় দুটোই আখের রস থেকে তৈরি হলেও চিনি প্রক্রিয়াকরণের কারণে ক্যালরি ছাড়া অন্য কোনো পুষ্টি উপাদান থাকে না, যা গুড়ে থাকে।
গুড়ে আয়রন থাকায় শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে, ফলে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে যাদের অন্য উৎস থেকে আয়রন গ্রহণের পরিমাণ কম, তাদের ক্ষেত্রে শুধুই গুড় থেকে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়।
গুড়ে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। জিংক ও ভিটামিন সি কমন কোল্ডে উপকারী। তাই অনেকেই শীতকালে একটু গুড় খান।
অনেকে মনে করেন, গুড় খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেট ভালো থাকে। যদিও গুড়ে ফাইবার প্রায় নেই বললেই চলে।
গুড়ে ক্যালরি ও অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে, তাই অসুস্থ অবস্থায় কেউ যখন কিছুই খেতে পারেন না, তখন শক্তিবর্ধক হিসেবে গুড় খাওয়া যেতে পারে।
গুড় অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের ভালো উৎস। এতে ফেনোলিক অ্যাসিড থাকায় শরীরে অক্সিডেন্ট ও স্ট্রেস কমায় ফলে বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিছু ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, চোখের মাসকুলার ডিজেনারেশন কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে ও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করে।
চিনির মতো গুড়ও একইভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে চিনির মতো গুড়কেও বাদ দিতে হবে।
বেশি বেশি চিনি বা গুড় খেলে স্থূলতার প্রবণতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ওজন পরবর্তীকালে হৃদ্রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আসলে চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এর ব্যবহার সীমিত করতে হবে, যা মোট ক্যালরির ৫ থেকে ১০ শতাংশ রাখলে খুব ভালো। গুড়ের ক্ষেত্রেও পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হবে।
ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা