ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকেই মনে করেন, ওষুধেই তো ওজন কমবে। খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, শরীরচর্চা আর হাঁটাহাঁটির তাহলে আর দরকারটা কী? হ্যাঁ, দরকার আছে। মনে রাখতে হবে, সবার জন্য এসব ওষুধ না। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই প্রয়োজন ছাড়া কোনো ওষুধই সেবন করা উচিত না। তা ছাড়া ওজন কমানোর জন্য যে ওষুধই সেবন করা হোক না কেন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ আর শরীরচর্চা চালিয়ে না গেলে ওজন খুব একটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
তাহলে কাদের প্রয়োজন ওজন কমানোর ওষুধ? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জেনে নিতে হবে বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) সম্পর্কে। বিএমআই হলো ভর ও উচ্চতা অনুযায়ী একজন মানুষের ওজন কত হওয়া উচিত, তার একটি মান। একজন মানুষের বিএমআই ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৪ দশমিক ৯ পর্যন্ত থাকা স্বাভাবিক। কারও বিএমআই যদি ২৫–এর বেশি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক কিছু নমুনা পরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দেবেন। যা থেকে বোঝা যাবে, মানুষটি স্থূলতা–সংক্রান্ত কোনো জটিলতায় ভুগছেন কি না। জটিলতা না থাকলে একজন পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধানে তাঁর খাদ্যাভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। আর জটিলতা ধরা পড়লে সেটির চিকিৎসা করাতে হবে। কারও বিএমআই যদি ৩০–এর বেশি হয়, শুধু তখনই তাঁকে ওজন কমানোর ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার যদি কারও বিএমআই ২৭–এর বেশি থাকে এবং তাঁর স্থূলতাজনিত কোনো জটিলতা থাকে, সে ক্ষেত্রেও ওজন কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। তবে শুধু ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব নয়।’ বলছিলেন স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
আগে বের করুন বিএমআই
এটি একেবারেই জটিল কিছু নয়। আপনি এক্ষুনি আপনার বিএমআই হিসাব করে ফেলতে পারবেন। এর জন্য জানা থাকতে হবে আপনার ওজন কত কেজি আর উচ্চতা কত মিটার। অবশ্য উচ্চতা মাপার একক হিসেবে আমাদের দেশে ‘ফুট’ বহুল ব্যবহৃত। তাতে কোনো ক্ষতি নেই। ফুট থেকে মিটারে রূপান্তর করে নিন আপনার উচ্চতাকে। এবার মিটারে মাপা এই উচ্চতাকে বর্গ করে নিন। সেটিও সহজ বিষয়। আপনার উচ্চতাকে যদি আপনার উচ্চতা দিয়েই গুণ করেন, তাহলেই পেয়ে যাবেন বর্গ। এবার আপনার ওজনকে ভাগ দিন ওই বর্গ দিয়ে। ফল যা পাবেন, সেটিই আপনার বিএমআই।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে
ডা. তাসনোভা মাহিন জানান, ওজন কমাতে তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। হুট করে ওজন কমালে সেই ওজন ধরে রাখাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আর ওজন কমানোর ওষুধ খেলে সেটিরও কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। এসব ওষুধ সেবনে ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা কিংবা শারীরিক দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জেনে রাখুন
ওজন কমানোর জন্য খাওয়ার ওষুধ যেমন আছে, তেমনি চামড়ার নিচে দেওয়ার ইনজেকশনও আছে। তবে ওজন কমানোর যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। এ ধরনের ওষুধ যত দিন চালানো হয়, তত দিনই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়, নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফলোআপ করতে হয়। কোনো ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে কিংবা ওই ওষুধ আপনার ক্ষেত্রে কার্যকর না হলে চিকিৎসক ওষুধ বদলে দিতে পারেন।
মোদ্দাকথা, ওজন কমানোর কোনো ঝটপট উপায় নেই। ওজন যেমন রাতারাতি বেড়ে যায়নি, তেমনি রাতারাতি কমানোও যাবে না। এই সত্য মেনে নিয়েই ওজন কমানোর ‘মিশন’-এ নামতে হবে। কাজেই ওজন কমানোর ‘শর্টকাট’ কোনো পথের খোঁজ না করতে যাওয়াই ভালো।