মুঠোফোন এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাইলেই মুঠোফোনকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। জীবনের প্রয়োজনে প্রযুক্তির সহায়তা নিশ্চয়ই নেবেন, তবে খেয়াল রাখুন নিরাপত্তার দিকগুলোও। মুঠোফোনসংক্রান্ত আদবকেতার বিষয়ও মাথায় রাখুন, নইলে বিপর্যয় ঘটতে পারে পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে। নিজের সুস্থতার কথাও ভুলে যাবেন না। কারণ, মুঠোফোনকেন্দ্রিক এক নতুন সমস্যার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সমস্যাটির নাম ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’। জেনে নিন বিস্তারিত।
মুঠোফোন দেখতে গিয়ে, খুদে বার্তা পাঠাতে গিয়ে বা মুঠোফোনে গেম খেলতে গিয়ে ঘাড় নুইয়ে রাখেন অনেকেই। বাড়ির অন্দর, গণপরিবহনসহ প্রায় সব জায়গায়ই আজকাল দেখা যায় এমন চিত্র। কিন্তু ক্রমাগত এই দেহভঙ্গিতে থাকার ফলে আপনি ঘাড়ের ব্যথায় ভুগতে পারেন। এমনকি কেউ কেউ আবার এটাও বুঝতে পারেন না যে তাঁর ঘাড়ব্যথার আসল কারণ হলো ভুল দেহভঙ্গিতে মুঠোফোন দেখা। তাই এ সমস্যার নামই দেওয়া হয়েছে ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম’। অর্থাৎ সারা দিনে লম্বা একটা সময় আপনি মুঠোফোনে ‘টেক্সট’ করার ভঙ্গিতে থাকলে আপনার দেহে দেখা দিতে পারে এই সমস্যা।
এ সমস্যায় কেবল ঘাড়ে ব্যথাই নয়, ঘাড়ের পেশিতে টান লেগে যাওয়া বা মাথাব্যথার মতো সমস্যাও হতে পারে। কারও কারও পিঠেও ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘদিন এভাবে ঘাড় নুইয়ে থাকার অভ্যাসের ফলে একসময় আপনার মেরুদণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, চাপ পড়তে পারে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর ওপরেও।
চার্জে দিয়ে কথা বলা
অনেকেই মুঠোফোন চার্জে দিয়ে কথা বলেন, যা একেবারেই অনুচিত। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এভাবে। অনেকেই হয়তো বলবেন, ‘আমি তো প্রায়ই এভাবে কথা বলি। কিছুই তো হয় না!’ মনে রাখতে হবে, দুর্ঘটনা রোজ ঘটে না। কেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি নেবেন?
সংবেদনশীল তথ্য বা ছবি রাখা
মুঠোফোনে কখনোই কারও ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল ছবি তোলা বা রাখা উচিত নয়। আপনি হয়তো মুঠোফোন খোলার জন্য স্ক্রিন লক এবং গ্যালারিতে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। তবে এসব নিরাপত্তাব্যবস্থা যে ঠুনকো, তা নিশ্চয়ই মানবেন। অসৎ উদ্দেশ্যে লক, প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড ভেঙে ফেলা অনেকের কাছে ছেলেখেলা। আর মুঠোফোন সারাই করতে দিলে কিংবা হারিয়ে গেলে এমনটা হওয়া তো অসম্ভব নয়। এ ছাড়া সাইবার–জগতে সংবেদনশীল ছবি ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার মতো ঘটনার শিকার হতে পারেন যে কেউ। স্মার্টফোনে এমন অ্যাপ থাকতে পারে, যেসব আপনার মুঠোফোনের গ্যালারিতে প্রবেশাধিকার পায়। ব্যাংকিং–সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্যও মুঠোফোনে সংরক্ষণ না করাই ভালো।
একটানা মুঠোফোন দেখা
মুঠোফোনের পর্দায় একটানা তাকিয়ে থাকার ফলে চোখেও চাপ পড়ে। তাই মুঠোফোনের ব্যবহার সীমিত রাখার চেষ্টা করুন। মুঠোফোন ব্যবহারের মধ্যে চোখের পলক ফেলুন। মাঝেমধ্যে চোখজোড়াকে বিশ্রামও দিন। পিডিএফ বইয়ের চেয়ে কাগজের বই পড়ুন বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করার চেয়ে কাছের মানুষকে বেশি সময় দিন। সম্পর্কও সুন্দর থাকবে, ভালো থাকবে চোখজোড়াও।
কথার ফাঁকে মুঠোফোন দেখা
কারও সঙ্গে কথা বলার সময় মুঠোফোন দেখবেন না। কর্মক্ষেত্রে মিটিং চলছে কিংবা রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের আড্ডা? মুঠোফোন সরিয়ে রাখুন অবশ্যই, এমনকি টেবিলের ওপরেও মুঠোফোন রাখবেন না। পারিবারিক সময়েও মুঠোফোন দূরে রাখুন। সবকিছুর জন্যই আলাদা সময় রাখুন।
নির্দিষ্ট স্থানে মুঠোফোন ‘সাইলেন্ট’ না করা
গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে, প্রার্থনার স্থানে কিংবা চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সময় মুঠোফোন ‘সাইলেন্ট’ করে নেবেন অবশ্যই। মুঠোফোনের শব্দে কারও কাজের ব্যাঘাত কেন ঘটাবেন, বলুন?
পরিস্থিতি বিচার না করে স্পিকার ও ইয়ারফোন ব্যবহার
পথেঘাটে মুঠোফোনের স্পিকার ব্যবহার করবেন না কিংবা উচ্চ স্বরে কথা বলবেন না। প্রয়োজনে ইয়ারফোন ব্যবহার করুন। কিন্তু আপনার সামনে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় আবার ইয়ারফোন কানে রাখবেন না যেন। এতে তিনি মনে করতে পারেন, আপনার কাছে হয়তো তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের কোনো গুরুত্বই নেই।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, ওয়েবএমডি