জন্মের পর শিশুর প্রথম ভাষা হলো কান্না। কান্না দিয়েই শিশু প্রথম মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। শিশু ক্ষুধা পেলে কাঁদে, ঘুম পেলে কাঁদে, ডায়াপার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলেও সে কাঁদে। কান্নার মাধ্যমেই সে তার প্রয়োজনটা জানান দেয়। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাঁদতে পারে।
জন্মের পর ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের দিকে শিশু কলিক বা পেটব্যথার কারণে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি কাঁদতে পারে। এ ব্যথাগুলো সন্ধ্যার দিকে বেশি হয়। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে।
ছোট শিশু, বিশেষ করে নবজাতকেরা টানা কাঁদতে থাকলে বাবা–মায়েরা ঘাবড়ে যান। যেহেতু তারা কথা বলতে পারে না, তাই কেন কাঁদছে, কী করলে কান্না থামবে, বোঝা মুশকিল। এ সময় ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। মিশুকে শান্ত করতে কখনোই ঝাঁকানো উচিত নয়, এতে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
শিশুকে শান্ত করার জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত—
শিশুর আরামের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়েছে কি না, নিশ্চিত হতে হবে। শিশুরা শুকনা, উষ্ণ ও আরামদায়ক পোশাক পছন্দ করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত গরম না লাগে।
শিশু ক্ষুধার্ত হলে খাওয়াতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত না খাওয়ানো হয়।
শিশুর কপাল, মাথা ও পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে সে আরাম বোধ করবে, ঘুমিয়ে যাবে।
দোলনায় বা কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে দোল দেওয়া যেতে পারে, ঘুমিয়ে গেলে তাকে আস্তে করে শুইয়ে দিতে হবে।
ঘুমানোর পরিবেশ হবে এমন যেন তার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
শিশুরা বেশি কাঁদলে স্ট্রলারে করে আশপাশে ঘোরালে অনেক সময় কান্না থেমে যায়। চারদিকের পরিবেশের বিভিন্ন দৃশ্য তাকে আনন্দিত করে।
ঘরে হালকা আলো জ্বালিয়ে রাখা ভালো। এতে তারা কম ভয় পায়।
কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করালেও অনেক সময় শিশুরা আরাম পায়।
হালকা সংগীত শোনানো যেতে পারে, গান গেয়ে ও ছড়া বলে শান্ত করা যেতে পারে।
ডায়াপার ভিজে আছে কি না লক্ষ করুন।
যদি শিশু কাঁদতে কাঁদতে এমন পরিস্থিতি হয়ে যায় যে মা একদমই শান্ত করতে পারছেন না এবং হতাশ হয়ে পড়ছেন, তাহলে মাকে বাড়ির অন্য কারও সাহায্য নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা শান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুও শান্ত হয়ে যায়।
সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের এই কান্না কমে যেতে থাকে।
নিচের লক্ষণগুলো থাকলে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে—
যদি কোনো শিশু ধারাবাহিকভাবে ৩ ঘণ্টার বেশি কাঁদে।
যদি শিশুর কান্নার ধরন দেখে মনে হয় যে সে কোথাও ব্যথা পাচ্ছে বা কষ্ট হচ্ছে।
যদি কান্নার সঙ্গে বমি, ডায়রিয়া, জ্বর বা খাবার গ্রহণে অনীহা থাকে।
যদি কিছুতেই শান্ত না করা যায়।
কান্নার সঙ্গে এগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর