দাদ ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণজনিত প্রদাহ। এটি একটি সাধারণ ছোঁয়াচে রোগ। ছত্রাক একধরনের অণুজীব, যা মৃতজীবী বা পরজীবী। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ৮ হাজার প্রকৃতির ছত্রাকের বর্ণনা দিয়ে থাকলেও ধারণা করা হয়, এর মধ্যে ৩০০ প্রকৃতির ছত্রাক মানবদেহে রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে।
শরীর অতিরিক্ত ঘামের কারণে স্যাঁতসেঁতে হলে ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে।
অপরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত পরিধেয় কাপড় ধুয়ে যথাযথভাবে না শুকানো।
আক্রান্ত ব্যক্তির পরিধেয় কাপড় কিংবা অন্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, যেমন চিরুনি, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর ব্যবহার।
যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রেও এটি বেশি দেখা যায়।
প্রথমে একটি ছোট লাল গোটা বা ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয় ও চুলকাতে থাকে। এটি অতি দ্রুত বৃত্তাকারে ছড়াতে থাকে ও অনেকটা চাকা বা রিংয়ের আকার ধারণ করে, যার কিনারাগুলো কিছুটা উঁচু ও লাল রঙের হয়ে থাকে। কখনো কখনো আঁশ দেখা যায় আবার ছোট ছোট পানিযুক্ত ফুসকুড়িও দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে চাকার পরিধি ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং অতিরিক্ত চুলকানোর কারণে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। মাথায় আক্রান্ত হলে চুল উঠে যায়। নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়।
দাদ হয়েছে ধারণা করা হলে যত দ্রুত সম্ভব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের সবার একত্রে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। দাদের চিকিৎসা কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি। তাই মাঝপথে কিংবা রোগ কিছুটা উপশম হলে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়।
দাদ হলে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই মলম ব্যবহার করা বা ওষুধ সেবনের প্রবণতা দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা স্টেরয়েড–জাতীয় মলম ব্যবহার করে থাকেন। যার ফলে প্রাথমিকভাবে লাল ভাব ও চুলকানি কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এতে ছত্রাক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, ছত্রাকনাশক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যথেচ্ছ ওষুধ সেবনে হতে পারে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ত্বক পুড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুতি কাপড় পরিধান ও অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঠান্ডা বা বাতাসের চলাচল ভালো এমন পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা এবং শরীর ঘেমে গেলে তা ধুয়েমুছে শুকানো।
পরিধানের কাপড় ও অন্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি না করা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ডা. আনজিরুন নাহার আসমা, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা