‘চল্লিশে পা রেখেছি। দুই সন্তানের মা হয়েছি, বিয়ের বয়সও এক যুগ পেরিয়ে গেল। এখন আর কত ফিট থাকব? এখন তো টুকটাক রোগবালাই হওয়ারই কথা, ভাঁজ পড়ার কথা ত্বকে, চেহারায় পড়বে বয়সের প্রলেপ।’
গড়পড়তা বাঙালি নারীদের ভাবনা এ রকমই। একই বাড়িতে আবার ভিন্ন চিত্র। একই বয়সের বা আরেকটু বেশি বয়সের স্বামী কিন্তু ঠিকই টি-শার্ট, কেডস পরে সকালে হাঁটতে বের হচ্ছেন। নিয়ম করে শরীর চেকআপ করাচ্ছেন। স্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে স্বামীকে হয়তো তাঁর রুটিন মানায় সাহায্য করছেন। কিন্তু নিজে রুটিন মানছেন না,খাবারের বেলায় একটা কিছু খেয়ে নিলেই হলো।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দুধ, ফলমূল খাওয়াতেও অনীহা। আর বাইরে হাঁটতে যাওয়া? হাস্যকর! সকালটা তো সন্তানদের স্কুল-অফিস-টিফিন—সব মিলে যাচ্ছেতাই। বিকেলে চিন্তা, এবার ওরা ঘরে ফিরবে, অফিসের কাজটা সময়মতো শেষ করতে হবে। দিনমান অন্যের কথা ভেবেই যে দিন গেল। কিন্তু আপনার কথা ভাবে কে?
বেশ, আপনার কথা কে ভাবল না ভাবল, তা নিয়ে অভিমান করার দরকার নেই। বরং নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। মা সুস্থ থাকলে পুরো পরিবার সুস্থ থাকে। এটি মনে রাখতে হবে। বয়স যখন চল্লিশের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন পুরুষের মতো নারীরও হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো সমস্যা।
কিছু রোগ আছে, যা প্রধানত বা কেবল মেয়েদেরই হয় এবং একটু সচেতনতার মাধ্যমে তা ঠেকানো যায়। যেমন অস্টিওপোরোসিস। মেনোপজের কাছাকাছি সময়ে শুরু হয়ে যায় নারীদের হাড় ক্ষয়, কেননা এই সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা নেমে আসতে থাকে তলানিতে, যথাযথভাবে এর প্রতিরোধ না করতে পারলে বয়সকালে কোমর বা হাতের কবজি ভাঙা, হাড়ব্যথা ও নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
৩৫-এর পরই বেড়ে যায় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি, বিশেষ করে কারও যদি পারিবারিক ইতিহাস থাকে। আর স্তন ক্যানসার হলো এমন একটি রোগ, যা সময়মতো নির্ণীত হলে সফল চিকিৎসা সম্ভব। জরায়ুমুখে সংক্রমণ বা ক্যানসার বা প্রস্রাবে সংক্রমণ, যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ ইত্যাদি একান্তভাবেই নারীর সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা এসব রোগ পুষে রাখেন বা পাত্তা দেন না।
যখন রোগটা ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে ওঠে, জটিল আকার ধারণ করে, তখনই কেবল বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।আর তখন দেখা যায় দেরি হয়ে গেছে অনেক। কিন্তু রোগবালাই হওয়ার আগেই যদি একটু সচেতন হওয়া যায়, নিজের যত্ন নেওয়া যায়, তবে ভোগান্তি কমানো যায় অনেকটাই।
ভালো থাকার জন্য জরুরি হলো একটা সুন্দর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস, যাতে চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে বেশি থাকবে সবজি বা ফলমূল, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার আর অবশ্যই দুধ। কেননা, এ বয়সেই শুরু হয়ে যায় হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস। এ ছাড়া যে যাঁর নিজের পদ্ধতিতে নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করবেন, যাতে ক্যালরি ক্ষয় হয়। কেউ ইচ্ছা করলে একটু স্ট্রেচিং করে নেবেন সময় পেলে, কেউ যোগ বা আসন করতে পারেন। নিজের ত্বকের পরিচর্যা, একটু গান শোনা বা সিনেমা দেখতে পারেন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। নিজের সঙ্গে সময় কাটান। তাহলেই দেখবেন, বয়স আপনাকে কাবু করতে পারছে না।