আমাদের লিভারে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদানের মতো চর্বিও জমা থাকে। তবে এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চর্বি জমা হলে একে ফ্যাটি লিভার বলে। ফ্যাটি লিভার অনেকের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না করলেও কারও কারও ক্ষেত্রে নীরবে লিভার সিরোসিসের মতো রোগ তৈরি করতে পারে। বর্তমানে ফ্যাটি লিভার একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফ্যাটি লিভারের প্রধান ঝুঁকি বা কারণ হিসেবে অধিক ওজন বা স্থূলতাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু যাঁদের ওজন স্বাভাবিক বা যাঁরা অত মোটা নন, তাঁদেরও কি ফ্যাটি লিভার হতে পারে?
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি না কম, তা নির্ধারণের সূত্র হচ্ছে বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই। এশীয় অঞ্চলের মানুষের বিএমআই ২৩–এর নিচে হলে ‘স্বাভাবিক’, ২৩-২৪ হলে ‘অধিক ওজন’ এবং ২৫–এর ওপরে হলে ‘স্থূল’ ধরা হয়।
যাঁদের বিএমআই ২৩–এর নিচে, অর্থাৎ যাঁরা স্লিম, তাঁদেরও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। এই হার প্রায় ১০-২০ শতাংশ। একে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় লিন ফ্যাটি লিভার।
১. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: ফ্যাটি লিভারের অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অনেক রোগের জন্য দায়ী। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স স্থূলকায় ব্যক্তিদের বেশি দেখা গেলেও স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তিরও হতে পারে।
২. পেটের মেদভুঁড়ি: পেটে অধিক মেদ জমে বেঢপ ভুঁড়ি আমাদের অনেকেরই আছে। স্বাভাবিক কোমরের সাইজ পুরুষের ক্ষেত্রে ৯০ সেন্টিমিটার আর নারীদের ক্ষেত্রে ৮০ সেন্টিমিটার। এর বেশি হলে পেটে অতিরিক্ত চর্বি আছে, ধরে নিতে হবে। বিএমআই অনুযায়ী ওজন বেশি না হলেও যাঁদের ভুঁড়ি আছে, তাঁদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
৩. খাদ্যাভ্যাস: অধিক রিফাইন্ড সুগার, অতিরিক্ত শর্করা এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।
৪. বংশগত প্রবণতা: কিছু সুনির্দিষ্ট ত্রুটিপূর্ণ জিনের সঙ্গে ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তাই মা–বাবার এ ধরনের জিনগত ফ্যাটি লিভার হলে সন্তানেরও হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেটা অতিরিক্ত ওজন না থাকা সত্ত্বেও।
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। খাবারে প্রচুর শাকসবজি, ফল থাকতে হবে। পরিমিত শর্করাজাতীয় খাবার খাবেন। ফাস্টফুড পরিহার করুন।
২. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা বা যেকোনো ব্যায়াম করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে।
৩. রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেতে হবে। অধিক রাতে খেয়ে ভরা পেটে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
আপনার ওজন বেশি বা স্বাভাবিক যা–ই হোক না কেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে অনেক সাহায্য করবে।
ডা. ফয়েজ আহমদ খন্দকার: লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা