বুক জ্বালাপোড়া বা গলা-বুক জ্বলা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। প্রায় মানুষই কমবেশি এ উপসর্গে ভুগে থাকেন। তাই এমন সমস্যা হলে কী করা উচিত, দীর্ঘদিন উপসর্গ থাকলে উদ্বেগের কিছু আছে কি না, জানা উচিত।
গলা-বুক জ্বালা করা বা হার্টবার্নের সাধারণ কারণগুলো হলো—
১. খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর সংযোগস্থল, যা ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার’ নামে পরিচিত, যদি ঢিলে হয়ে যায় বা তার স্বাভাবিক সংকোচনের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
২. পাকস্থলীর হায়াটাস হার্নিয়া হলে।
৩. পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও পাকস্থলীর সংকোচন-প্রসারণে স্থিরতা।
৪. পেটের ভেতরকার চাপের বৃদ্ধি যেমন গর্ভাবস্থায় বা শারীরিক স্থূলতার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
৫. ক্ষেত্রবিশেষে খাদ্যনালির চলাচল স্বাভাবিকের থেকে ধীর হলেও এমনটি হতে পারে।
হার্টবার্ন হলে গলা-বুক জ্বালাপোড়া করে, বুকে ব্যথা হতে পারে। শুকনা কাশি, আকস্মিক স্বরের পরিবর্তন, হঠাৎ মুখে টক পানি আসা ইত্যাদিও এর উপসর্গ।
১. খাদ্যনালির ও পাকস্থলীর সংযোগস্থলে ঘা হয়ে যেতে পারে।
২. খাদ্যনালির নিচের অংশ চেপে যেতে পারে।
৩. রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। খাদ্যনালির নিচের অংশে দীর্ঘদিন ঘা থাকলে দীর্ঘমেয়াদি রক্তপাতের ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
৪. ব্যারেটস ইসোফেজাইটিস নামের কোষীয় পরিবর্তন হতে পারে। এর থেকে পরে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
গলা-বুক জ্বালাপোড়া এবং এর পরবর্তী জটিলতা থেকে বাঁচতে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আবশ্যক—
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
২. নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করুন।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করুন।
৪. তিন বেলা মূল খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত তরল বা পানি পান থেকে বিরত থাকুন। মূল খাবারের দেড় ঘণ্টা আগে অথবা দেড় ঘণ্টা পর পানি খান।
৫. একবারে ২০০ মিলি লিটারের বেশি তরল বা পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো।
৬. খাবারের সময় পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ সব সময় খালি রাখা উচিত।
৭. নামাজ বা প্রার্থনা খাওয়ার পূর্বে শেষ করা ভালো।
৮. রাতের খাবার খাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যান।
৯. কিছু খাবার যা এই উপসর্গ বাড়ায়, যেমন চা, কফি, কোমল পানীয়, মসুর ডাল, চকলেট, দুধ ও দুধে তৈরি খাবার।
১০. ওমিপ্রাজল, ডমপেরিডন এবং কিছু নতুন অ্যাসিড পকেট নিউট্রালাইজার জাতীয় ওষুধ এই উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
*ডা. খান মো. নাজমুস সাকিব: সহকারী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র বিভাগ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ