যে ১০ উপায়ে প্রাকৃতিকভাবে বাড়বে সুখের হরমোন

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রশান্তি-অশান্তি—সব মিলিয়েই তো বেঁচে থাকাটা দারুণ! অবশ্য সব দিন এক রকম যায় না। সব দিন মনের আকাশের রংটা একই থাকে না। হয়তো মন খারাপ করার মতো তেমন কোনো বড় কারণ নেই, তবু কেমন যেন একটা বিষণ্নতা ছড়িয়ে থাকে কোনো কোনো দিন সেই আকাশটা জুড়ে। কেন এমন হয়?

কোনো ভালো লাগা বা আনন্দের কাজ করার পর মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বহুগুণে বেড়ে যায়। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি হয় (প্রতীকী ছবি)
ছবি: পেক্সেলস

হ্যাপি হরমোনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হরমোন হলো ডোপামিন। কোনো ভালো লাগা বা আনন্দের কাজ করার পর মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বহুগুণে বেড়ে যায়। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি হয়। যেমনটি হয় প্রাণ খুলে হাসলে, পছন্দের খাবার খেলে, গান শুনলে, প্রিয় মানুষের সাহচর্যে গেলে, প্রিয় দল খেলায় জিতলে, অফিসে বস বা সহকর্মীর প্রশংসা পেলে, প্রেমে পড়লে। ভালো অনুভব করার জন্য দেহে ডোপামিনের মাত্রা থাকতে হয় ঠিকঠাক। এ হলো ভালো থাকার হরমোন। প্রাকৃতিকভাবে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ানোর পদ্ধতিগুলো বেশ সহজ। তবে সব পদ্ধতি আবার স্বাস্থ্যকরও নয়। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ডোপামিন বাড়ানোর চেষ্টা করতে জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এমন ১০ উপায়ের খোঁজ দিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।

১. পছন্দের খাবারদাবার

পছন্দের খাবার খেলে ডোপামিন বাড়তে পারে। এ সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু মুশকিলটা হলো সুস্বাদু বহু খাবারই অস্বাস্থ্যকর, উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন। এই যেমন মাখন বা মেয়োনেজ দিয়ে তৈরি খাবার, কিংবা রোস্ট বা বিরিয়ানি। জিবে জল আনা এসব খাবার যদি আপনি রোজ খেতে থাকেন, তাহলে মন হয়তো ভালো থাকবে, কিন্তু শরীরের বারোটা বেজে যাবে। বরং এমন খাবার বেছে নিন, যেগুলোতে ডোপামিন বাড়বে, আবার স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে না। বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ খেতে পারেন। সবজি খেলেও ডোপামিন বাড়ে।

২. ঘাম ঝরান

নিয়মিত ব্যায়ামে ডোপামিন বাড়ে। যেকোনো ধরনের ব্যায়ামই করতে পারেন। হালকা ব্যায়াম, ভারী ব্যায়াম, বাড়িতে ব্যায়াম, জিমে ব্যায়াম—যেটিই হোক না কেন, উপকার পাবেন। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘাম ঝরলে ডোপামিন নিঃসৃত হয়।

বই পড়লেও সুখের হরমোন নিঃসরণ হয়

৩. লক্ষ্য পূরণ

যেকোনো লক্ষ্য পূরণ হলে আপনার শরীরে ডোপামিন বাড়বে। রোজকার জীবনে ছোটখাটো কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। সারা দিনে আপনি কোন কাজটা অবশ্যই সম্পন্ন করতে চান, তা ঠিক করে ফেলুন সকালেই। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই কাজ করুন। সপ্তাহ, মাস বা বছরভিত্তিক লক্ষ্যও নির্ধারণ করতে পারেন।

৫. আধ্যাত্মিক কাজ

যেকোনো কাজ, যাতে আপনি নিজেকে প্রশান্ত করতে পারেন, তাতেই আপনার দেহে ডোপামিন বাড়বে। নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মীয় জীবনাচরণের জন্য কিছুটা সময় রাখতে পারেন রোজ। ধ্যানও করতে পারেন।

৬. বই পড়া

বই পড়লে ডোপামিন নিঃসরণ হয়। ছুটির দিন দুপুরে আয়েশ করে শুয়ে গল্প-উপন্যাসের বই পড়ার অভ্যাসটা হারিয়ে গেছে শহুরে জীবন থেকে। দিনের যেকোনো সময়েই কিছু একটা পড়ুন। ভালো লাগবে। মুঠোফোন স্ক্রল করলে সাময়িক ভালো লাগা কাজ করতে পারে, তবে এই ভালো লাগাটা কিন্তু দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় না। অন্যদিকে বই পড়লে যে ভালো লাগাটা সৃষ্টি হয়, তার একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে আপনার মনে।

সম্পর্কের বন্ধন যত অটুট থাকবে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত সম্পর্কে আপনি যতটা নিরাপদ বোধ করবেন, শরীরের ডোপামিনের ভারসাম্য রাখা ততই সহজ হবে

৭. পারিবারিক ও সামাজিক জীবন

অন্যের জন্য কিছু করুন। বাড়ির কাজে হাত লাগান। গৃহকর্মী নিশ্চয়ই আপনার কাজে সহায়তা করবেন, কখনো কখনো আপনিও তাঁর নির্ধারিত কাজে হাত লাগাতে পারেন। প্রতিবেশীদের খোঁজ নিন। আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। পরের উপকার হয়, এমন কাজে নিজেকে নিঃস্বার্থভাবে নিয়োজিত করুন।

৮. প্রাণ ও প্রকৃতির সঙ্গে সময়যাপন

প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ সামলানোর এক দারুণ উপায়। প্রকৃতির মধ্যেও কাটাতে পারেন কিছুটা সময়। এ ধরনের কাজেও ডোপামিন নিঃসরণ হয়। বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে সেগুলোকে সময় দিন রোজ। পথের প্রাণীদের জন্যও কিছু করতে পারেন।

৯. সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল

আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হোন। সম্পর্কের বন্ধন যত অটুট থাকবে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত সম্পর্কে আপনি যতটা নিরাপদ বোধ করবেন, শরীরের ডোপামিনের ভারসাম্য রাখা ততই সহজ হবে।

১০. ইতিবাচক চিন্তা, অনুপ্রেরণা

ইতিবাচক অনুভূতিগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের কর্মোদ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন অফিসে প্রশংসা পেলে সেই কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেই কাজে নিজের দক্ষতার ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং কাজটি ভবিষ্যতে আবার করার সুযোগ পেলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এটিকে বলা যায় ডোপামিন রিওয়ার্ড সিস্টেম, যা আমাদের দক্ষতা তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।