স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত থাকে। সিবিসি বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে এই মাত্রা দেখা হয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে তিনটি কারণে প্লাটিলেট কমে যায়—সরাসরি অস্থিমজ্জায় এর প্রভাবের কারণে, রক্তের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে ও ইমিউন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। ডেঙ্গু ছাড়াও যেকোনো ভাইরাস জ্বরে প্লাটিলেট কমতে পারে। তবে ডেঙ্গু জ্বরে এটি হঠাৎ কমে যেতে দেখা যায়। আর এতেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যদিও প্লাটিলেট কমে যাওয়া ডেঙ্গুর মূল জটিলতা নয়।
জ্বরের চতুর্থ/পঞ্চম/ষষ্ঠ দিনে প্রথমে দেখতে হয়, রোগীর রক্তের হিমাটোক্রিট বেড়ে গেছে কি না। এটি রক্তের ঘনত্বের একটি নির্দেশক। রোগী যদি দৈনিক আড়াই লিটার পানি খেতে না পারে বা যদি বমি ও ডায়রিয়া হয় এবং প্লাজমা লিকেজ বা যেকোনো কারণে পানিশূন্যতা হয়, তাহলে হিমাটোক্রিট বাড়ে। এর সঙ্গে যদি রক্তে শ্বেতকণিকা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়, তার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্লাটিলেটের সংখ্যাও কমে যেতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তৃতীয় থেকে সপ্তম দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে, আবার কোনো চিকিৎসা ছাড়াই অষ্টম বা নবম দিনের মধ্যে প্লাটিলেট বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
শরীরের কোনো স্থানে নীলচে বা ছোট ছোট লাল ছোপ দেখা দেয়।
প্লাটিলেট ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। ২০ হাজারের নিচে নামলে কোনো আঘাত ছাড়াও রক্তপাত হতে পারে।
কারও যদি শরীরের কোনো স্থানে রক্তনালির কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকে, তখন সেখান থেকে রক্তপাত হতে পারে। এটা খুব বিরল অবস্থা। তবে যেহেতু এটা আগে থেকে কারও জানা থাকে না, তাই কার রক্তপাত হবে আর কার হবে না, তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল; কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব।
প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে ‘ইন্টারনাল ব্লিডিং’ পেটের ভেতর বা মস্তিষ্কেও হতে পারে। এ সময় স্যালাইন দেওয়ার পরও রক্তচাপ কমে যায় ও হিমাটোক্রিট কমে যেতে দেখা গেলে রক্ত সঞ্চালনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
রক্তপাতের কারণ শুধু প্লাটিলেট কমে যাওয়া নয়, রক্তের ক্লটিং ফ্যাকটরের অভাবেও শরীরে রক্তপাত হয়। সেপসিস বা পচনশীল ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তখন রক্তে ডি–ডাইমার নামের উপাদানটি এবং সিআরপি বেড়ে যায়, কমে যায় প্লাটিলেট। রক্তের কালচার পাঠিয়ে তৎক্ষণাৎ আ্যান্টিবায়োটিক ইনজেশন শুরু করা উচিত।
প্লাটিলেট কম থাকার অন্যান্য কারণের মধ্যে একটি হলো আইটিপি (ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা)। এ ক্ষেত্রে প্লীহা বড় থাকে। পোস্ট কোভিড সিনড্রোম বা কোভিড টিকার কারণে বা শর্ষে তেল রান্নায় ব্যবহার করলে, লিভারের অসুখ, সিসটেমিক লুপাস ইরাইথ্রোমেটোসাস, একিউট লিউকেমিয়া বা কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্লাটিলেট কম হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে প্লাটিলেট কম পাওয়া গেলে দেখতে হবে আরও কোনো উপসর্গ আছে কি না। কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চিকিৎসাও শুরু করতে হয়।
প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু হলে বা এই মৌসুমে জ্বর হলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
ডেঙ্গু রোগীর পানিশূন্যতা, বমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, প্লাটিলেট দ্রুত কমলে বা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে; বমি, মলের সঙ্গে কিংবা মাসিকে অত্যধিক রক্তপাত দেখা গেলে; প্রস্রাব সারা দিনে ৬ বারের কম হলে; বাড়িতে চিকিৎসা সম্ভব না হলে বয়সী, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।