যেকোনো খাবার চাইলেই যখন তখন খাওয়া যাবে না, তাতে শরীরের উপকার না হয়ে হতে পারে অপকার
যেকোনো খাবার চাইলেই যখন তখন খাওয়া যাবে না, তাতে শরীরের উপকার না হয়ে হতে পারে অপকার

কোন খাবার কখন খাবেন, কখন খাবেন না

কাজ করতে লাগে শক্তি আর শক্তির উৎস খাবার। শারীরিক বা মানসিক সব কাজের জন্য শক্তি, অর্থাৎ খাবারের প্রয়োজন বলে যেকোনো খাবার চাইলেই যখন তখন খাওয়া যাবে না। তাতে শরীরের উপকার না হয়ে হতে পারে অপকার। অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, পেটের সমস্যা, ত্বকের ওপর নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাবসহ অনেক রোগ। তাই সময়মতো সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। জেনে রাখুন কিছু নিয়মকানুন—

সারা দিনে কোন খাবার কখন খাবেন

সকালের খাবার: সকাল সাত-আটটার মধ্যে, খুব দেরি হলেও ১০টার মধ্যে অবশ্যই। নয়তো তা দুপুরের খাবার সময়ের ওপর প্রভাব ফেলবে।

দুপুরের খাবার: বেলা ১-২টার মধ্যে, সর্বোচ্চ ৩টা, নাহলে তা রাতের খাবারের সময় পিছিয়ে দেবেন।

রাতের খাবার: ১০টার মধ্যে। তবে যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য শেষ সময় রাত ৮টা।

কোনো বেলায়ই খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া যাবে না, তাতে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে।

কলা

একজন সুস্থ ব্যক্তি যেকোনো সময় কলা খেতে পারেন

পাকা কলায় আছে একধরনের অদ্রবণীয় আঁশ, যা শরীরে যথেষ্ট শক্তি জোগাতে সক্ষম। একজন সুস্থ ব্যক্তি যেকোনো সময় কলা খেতে পারেন। তবে যাঁদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে এবং দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাঁরা সতর্ক থাকবেন, বিশেষত যাঁরা হৃদ্‌রোগে ভুগছেন কিংবা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন। শিশুদের জন্যও পাকা কলা বেশ উপকারী। এতে ১০৫-১১০ ক্যালরি শক্তি থাকে। প্রোটিন ১ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেট ২৮ গ্রাম, ১৫ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি আর পটাশিয়াম থাকে ৩৫৮ মিলিগ্রাম।

কাঁচা/পাকা পেঁপে

পেট ঠান্ডা করার জন্য পেঁপে অতুলনীয়

পেট ঠান্ডা করার জন্য পেঁপে অতুলনীয়। পেঁপেতে পাবেন ১২০ ক্যালরি, ৩০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫ গ্রাম ফাইবার বা আঁশ আর ১৮ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি। খেতে পারেন দিনের যেকোনো সময়, অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পেঁপের সুনাম আছে।

লিচু

কোনোভাবেই খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবে না

কোনোভাবেই খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবে না, এমনকি রাতে ঘুমানোর আগেও খাওয়া নিষেধ। তবে দিনের যেকোনো সময় হালকা খাবারের পর খেতে পারেন। পরিমাণে কম খাওয়া ভালো, নাহলে পেটব্যথা ও পরবর্তী সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।

আম

আমে ক্যালরির পরিমাণ ১৯০-২২০

অ্যাসিডিটির সমস্যা না থাকলে আম দিনে বা রাতে যেকোনো সময় খেতে পারেন। আম ঘুমে বেশ সাহায্য করে। এতে ক্যালরির পরিমাণ ১৯০-২২০।

মাল্টা, কমলা, জলপাই ও আমলকী

শরীরের ক্ষত সারাতে কমলার উপকারী

অতিরিক্ত ভিটামিন সি–জাতীয় যেকোনো ফল সব সময় খাওয়ার পরেই খেতে হয়, খাওয়ার আগে খেলে মারাত্মক অ্যাসিডিটির ঝুঁকি থাকে। শরীরের ক্ষত সারাতে এসব ফলের জুড়ি নেই।

তরমুজ

মৌসুমি ফল হিসেবে তরমুজ জনপ্রিয়

মৌসুমি ফল হিসেবে তরমুজ জনপ্রিয়। পানিশূন্যতা রোধে দিনে বা রাতে যেকোনো সময় তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। তরমুজের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বক ভালো রাখে। একটি মাঝারি আকারের তরমুজে ক্যালরির পরিমাণ মাত্র ৪০-৬০।

দুধ

সকালের নাশতায় এক গ্লাস দুধ শিশুদের জন্য খুব উপকারী

সকালের নাশতায় এক গ্লাস দুধ শিশুদের জন্য খুব উপকারী। আর বড়দের বেলায় রাতে ঘুমানোর আগে। তবে যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে বা দুধ খেলেই পেটের পীড়া শুরু হয়, তাঁরা অবশ্যই দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

সালাদ

সালাদ জনপ্রিয় মিশ্র খাবার, যা মূলত কাঁচা সবজি ও ফল দিয়ে তৈরি করা হয়। শসা, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে দেশি সালাদ তৈরি হলেও বিভিন্ন রকম সালাদে ব্যবহার করা হয় ভিন্ন ভিন্ন উপাদান। যেমন ফলের সালাদে থাকে আপেল, আঙুর, পাকা পেঁপে, তরমুজ, স্ট্রবেরি, আনার/ডালিম, পাকা কলা, কিউই ফল, ড্রাগন ফ্রুট, ব্লুবেরি, আম, চিয়া সিড, কমলা, আনারস ইত্যাদি। ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে সালাদের জুড়ি নেই। আর নিয়মিত রঙিন সালাদ খেলে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসসহ রয়েছে নানান উপকারিতা।

সালাদ তৈরিতে কী ব্যবহার করছেন, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই দিনের কোন সময় সালাদ খাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ

পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সালাদ তৈরিতে কী ব্যবহার করছেন, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই দিনের কোন সময় সালাদ খাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর তা মেনে না চললে হতে পারে হিতে বিপরীত। সবজির সালাদ, ফলের সালাদ কিংবা চিকেন সালাদ, যেটাই হোক না কেন, এতে কোনোভাবেই মেয়োনিজ বা চিজ ব্যবহার করা যাবে না। এর বদলে ইয়োগার্ট বা টক দই ব্যবহার করতে হবে। সালাদ তৈরি করে এক-দুই ঘণ্টার বেশি রেখে দিয়ে খাওয়া যাবে না কোনোভাবেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সালাদ খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে সকালের নাশতা এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার মাঝামাঝি সময়টা, এতে পেট ভরা থাকে, আবার দুপুরে বেশি খাওয়ার প্রবণতা চলে যায়। ডায়েট কিংবা গর্ভধারণের সময় এই সালাদ শরীরের পুষ্টি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সূত্র: ওয়েবএমডি, হেলথলাইন, ওয়াশিংটন পোস্ট

হিমেল বিশ্বাস: আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা।