দাঁত বা মাড়ির রোগে আক্রান্ত হননি, এমন রোগীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। একটু সচেতন হলে এসব রোগের বেশির ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। মুখ পরিষ্কারের সময় নানা লুকানো অংশ পরিষ্কার করা দুষ্কর। এর ওপর যাঁদের এলোমেলো দাঁত, লালা নিঃসরণ কম, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি, ইনহেলার ব্যবহারকারী, ক্যানসারের রোগী, অতিরিক্ত মিষ্টান্ন খাওয়ার অভ্যাসসহ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্য সব সময় হুমকিতে থাকে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় কোনো উপসর্গ না থাকলেও ছয় মাস অন্তর নিয়মিত একজন দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুখের মধ্যকার প্রায় সব রোগের শুরুতে তেমন উপসর্গ থাকে না। নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে এর চিকিৎসা হয় সহজ, খরচও নাগালের মধ্যে থাকে।
ডেন্টাল ক্যারিজ
দাঁতের গর্ত তৈরির শুরু থেকে উপসর্গ, যেমন ব্যথার অনুভূতি বা মজ্জা আক্রান্ত হতে অনেক সময় লাগে। প্রথমে দাঁতের মধ্যে ছোট কালো দাগের মতো হয়, দুই দাঁতের মধ্যে বা যেকোনো পৃষ্ঠে খাবার আটকায়, দুর্গন্ধ, শিরশির অনুভূতি হয়। সময়ের সঙ্গে সংক্রমণ ভেতরের মজ্জা আক্রান্ত করবেই।
প্রাথমিক পর্যায়ে ফিলিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্ত দাঁত সুস্থ হলেও মজ্জা আক্রান্ত হলে প্রয়োজন হয় রুট ক্যানেল চিকিৎসা ও কৃত্রিম মুকুট সংযোজনের। দাঁতের গর্ত শুরু হলে ওষুধ বা অন্য কোনো পন্থায় তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যাঁরা ওষুধ খেয়ে সাময়িক কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেন, তাঁরাও বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসস্ট্যান্স, চোয়ালের মধ্যে সিস্ট, টিউমার ইত্যাদির শঙ্কা থাকে। শুরুতে চিকিৎসা করলে এসব ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মাড়ির রোগ
স্কেলিং নামের খুব সাধারণ ও নিরাপদ চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের পৃষ্ঠে জমে থাকা জীবাণু ও পাথর দূর করা হয়। মুখে এসব জমে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। মাড়ি রোগকে নীরব ঘাতক বলার কারণ, এখান থেকে দাঁত ও দাঁতের ধারককলার ক্ষতি তো হয়ই, পাশাপাশি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস বা কিডনি রোগসহ নানা জটিলতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভাবস্থায় মাড়ি রোগ অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মুখের ঘা বা ক্ষত
মুখের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের ঘা, রং পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে হতে পারে ক্যানসারের মতো ভয়ানক জটিলতা। মুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এর চিকিৎসার সফলতা প্রায় শতভাগ।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা