ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবারের পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে দেওয়া যে একধরনের রোগ, সে কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু খাবার খেয়ে খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কার কারণে খাবার এড়িয়ে চলাটাও যে একটা রোগ, সেটা জানেন? ব্যাপারটা কিন্তু এ রকম নয় যে নিজেকে ‘মোটা’ ভাবছেন বলে তিনি কম খাচ্ছেন কিংবা পছন্দ করেন না বলে তিনি নির্দিষ্ট কোনো খাবার এড়িয়ে চলছেন। বরং তিনি খাবার এড়িয়ে চলছেন নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা এড়াতে। এ আবার কেমন রোগ? জেনে নিন আজ।
খাবারসংক্রান্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণে এমন রোগ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। যেকোনো বয়সেই এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। পরিস্থিতি এমন মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে ভয়াবহভাবে কমে যেতে পারে ওই ব্যক্তির ওজন। তিনি অপুষ্টিতে ভোগেন, তাঁর পেটে হতে পারে অস্বস্তিকর অনুভূতি। অন্যদের সঙ্গে খেতে গিয়েও বিপত্তিতে পড়েন তাঁরা। সব মিলিয়ে তিনি মানসিক এবং শারীরিক—দুই দিক থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই রোগের পোশাকি নাম অ্যাভয়েডেন্ট রেস্ট্রিকটিভ ফুড ইনটেক ডিজঅর্ডার। এই রোগের নানান দিক সম্পর্কে জানালেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
ধরা যাক, আপনার সামনে কেউ তাড়াহুড়া করে কোনো খাবার খাচ্ছেন। হঠাৎ শ্বাসনালিতে খাবার গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই ঘটনার ছাপ পড়তে পারে প্রত্যক্ষদর্শী যে কারো ওপর। পরবর্তীতে ওই ধরনের খাবার দেখলেই মনে হতে পারে, ‘এই খাবারটা তো আমার শ্বাসনালিতে চলে যেতে পারে।’ প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তির নিজেরও এমনটা মনে হতে পারে।
আবার ধরুন, কোনো খাবার খাওয়ার পর কারও বমি হলো। এ ধরনের যেকোনো খাবার খেলেই আবার বমি হওয়ার আশঙ্কা ঢুকে যেতে পারে তাঁর মনে। এমনও হতে পারে যে এই ভাবনাটা থেকেই তিনি হয়তো আর বেরোতে পারলেন না। সেই থেকেই নির্দিষ্ট ধরনের বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে তাঁর মধ্যে। তাঁকে আগে কখনো জোরপূর্বক খাবার খাওয়ানো হয়ে থাকলে কিংবা তিনি জীবনের কোনো পর্যায়ে খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে থাকলেও এই রোগ হতে পারে। অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থেকে থাকলেও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট ধারার গড়ন, রং বা ঘ্রাণের খাবার এড়িয়ে চলতে শুরু করতে পারেন। খাওয়ার আগেই তাঁর মনে হতে পারে, পেটটা ভরাই আছে। তিনি বেছে বেছে কেবল এমন কিছু খাবারই গ্রহণ করেন, যা তাঁর কাছে ‘নিরাপদ’ মনে হয়। ফলে তাঁর রোজকার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না। সামগ্রিকভাবেই খাবারের আগ্রহ কমে যেতে পারে তাঁর।
এই রোগের চিকিৎসা গ্রহণ আবশ্যক। আপনার চেনাজানা পরিমণ্ডলে এমন কাউকে দেখলে অবশ্যই তাঁকে চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করুন। ‘কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যাবে’ ভেবে চুপচাপ বসে থাকা উচিত নয়। কারণ, চিকিৎসা করানো না হলে দিনকে দিন রোগটি কেবল জটিলতার দিকেই যেতে থাকে।