বিয়ের পর নানা ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায় নবদম্পতির জীবন। অনেকের কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দেয় এ সময়। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন তাঁরা। তাই কিছু স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিকল্পনা বিয়ের আগেই নিয়ে রাখতে পারলে ভালো।
দুজন মানুষের সম্মিলনে একটা নতুন পরিবারের শুভসূচনা করে বিয়ে। তবে আগে থেকে প্রস্তুতি না নেওয়া থাকলে এই জীবনের শুরুতে নতুন কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে, নতুন বিয়ের পর অনেকেই কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন। অনেকে আবার স্বাস্থ্যগত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আমাদের দেশে যৌনশিক্ষা (সেক্স এডুকেশন) বিষয়টি পড়ানো হয় না বলে অনেকে এ নিয়েও শঙ্কা-ভীতিতে ভোগেন।
বিয়ের পর স্বামী–স্ত্রী দুজনের জীবনেই একটা পরিবর্তন ঘটে। খাওয়াদাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, শারীরিক–মানসিক নানা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নবদম্পতির জীবন এগিয়ে চলে। খাবারদাবারের অভ্যাস পরিবর্তিত হয়, প্রচুর নেমন্তন্ন বা বাইরে খাওয়াদাওয়া করে অ্যাসিডিটি, পেটের পীড়া বা বদহজমের সমস্যা হয়। বিয়ের পর অনেকের ওজনও বাড়ে। আবার নিজেদের বা নতুন আত্মীয়স্বজনকে সময় দিতে গিয়ে ঘুম বা বিশ্রামের সময়ও তেমন মেলে না, ফলে অনেকেই ক্লান্তি, মাথাব্যথা ইত্যাদিতে ভোগেন। এ সময় সচেতন থেকে খাওয়া বা বিশ্রামের ঘাটতি যদি পুষিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
নতুন বিয়ের পর, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সংক্রমণ (ইউরিন ইনফেকশন) বা জ্বালাপোড়া প্রায়ই দেখা যায়। এটাকে বলে হানিমুন সিস্টাইটিস। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ওষুধ খাওয়া দরকার। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাসংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে, শারীরিক সংসর্গের পর ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের সংক্রমণের হার কমানো যায়। পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়া, প্রস্রাবের বেগ এলে চেপে না রাখা, যৌন সংসর্গের আগে ও পরে মূত্রথলি খালি করা ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে প্রস্রাবের সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।
আবার কিছু কিছু রোগ আছে, যেগুলো শুধু শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেই ছড়াতে পারে। জননাঙ্গের কিছু সংক্রমণ, যেমন জেনিটাল হারপিস, প্যাপিলোমা ভাইরাস, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি রোগ বিয়ের পর দেখা যেতে পারে। সিফিলিস, গনোরিয়ার মতো সংক্রামক ব্যাধিও ছড়াতে পারে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে। এসব সংক্রমণ নবদম্পতির কারও থাকলে অন্যজনকেও তা সংক্রামিত করতে পারে। হেপাটাইটিস বি বা সি কিংবা এইচআইভির মতো মারাত্মক রোগও শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা প্রয়োজনে বিয়ের আগেই করে নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। শুধু তা–ই নয়, থ্যালাসেমিয়া বা এই ধরনের বংশগত রোগব্যাধি নির্ণয়ের জন্যও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিলে ভালো। যেমন মা-বাবা যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তানের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। বিয়ের আগেই কিছু রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের জন্যই ভালো।
শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, বিয়ের পর মানসিক চাপ থেকেও সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। নতুন সংসার ও নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয় উভয়কেই, বিশেষ করে স্ত্রীকে। তাই দেখা যায় বিয়ের আগে থেকেই উৎকণ্ঠায় (অ্যাংজাইটি) ভুগতে থাকেন কেউ কেউ। সে জন্যই শরীরের যত্ন শুধু নয়, মনের যত্ন নেওয়াও খুব দরকার।
বিয়ের পরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। অনেকেই বিয়ের পরপরই সন্তান নিতে আগ্রহী হন না। শিক্ষা ও ক্যারিয়ার ভাবনাও এর সঙ্গে জড়িত। আর্থিক, শারীরিক, মানসিক দিক থেকে পুরোপুরি তৈরি না হয়ে, পরিকল্পনা না করে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেওয়াও ঠিক নয়। তাই বিয়ের পর পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। তবে ঠিক কোন উপায়টি অবলম্বন করবেন, এ নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন নবদম্পতি। পরিবার পরিকল্পনাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নেওয়া ভালো। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নিলে সবচেয়ে ভালো। সরকারি–বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও এ–সংক্রান্ত উপদেশ দিয়ে থাকে। নবদম্পতির জন্য ব্যারিয়ার মেথড বা কনডম বেশ ভালো, এতে সংক্রমণও প্রতিরোধ করা যায়। মুখে খাওয়ার নানা রকমের বড়িও পাওয়া যায়। সেগুলোও সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সুবিধাজনক। খাওয়ার বড়ির তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে কারও কারও কিছু সমস্যা হতে পারে। আবার নিয়ম মেনে না খেলেও এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই সঠিক জায়গায় গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা শুরু করলে অহেতুক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
বিয়ে–সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরিকল্পনা বিয়ের পর নয়, আগে থেকেই নিতে হবে। মানতে হবে সাধারণ কিছু স্বাস্থ্যবিধি। তাহলে জীবনের এই নতুন শুরুর সময়টিতে অসুস্থতার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার বাদ সাধতে পারবে না।