মুঠোফোন ছাড়া দিনরাত্রি এখন দুঃসহ কল্পনা। কিছুক্ষণ পরপর ফোনের ‘চাঁদমুখ’টা দেখতে না পারলে অনেকেরই অস্বস্তি হয়। এই মুঠোফোন ছাড়া থাকলে যে একধরনের অস্বস্তি বা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, তাকে বলে ‘নোমোফোবিয়া’। যাহোক, নোমোফোবিয়া আজকের আলোচ্য নয়। বরং মুঠোফোনের পরিচ্ছন্নতাতেই থাকা যাক। ঘরে–বাইরে সারাক্ষণ সঙ্গে থাকে বলেই হয়তো মুঠোফোনের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অনেকেই তেমন মাথা ঘামান না। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ একটি টয়লেটের সিটে যে পরিমাণ জীবাণু থাকে, তার প্রায় ১০ গুণ জীবাণু থাকে একটি মুঠোফোনে।
ভেবে বলুন তো শেষ কবে আপনি আপনার মুঠোফোন পরিষ্কার করেছেন? পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফোনটি যে স্থানে রেখেছিলেন, সেটাও বা কতটা পরিষ্কার ছিল? মুঠোফোনের এই অপরিচ্ছন্নতার পেছনে আপনার নিজের হাতের দায় সবচেয়ে বেশি। হাত যত নোংরা বা অপরিষ্কার থাকুক না কেন, ফোন ধরতে খুব একটা দ্বিধা করি না অনেকেই। কাজের ব্যস্ততায় কিংবা খেতে বসে, এমনকি টয়লেটে বসেও হাতের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর না দিয়ে মুঠোফোন ধরেন অনেকে। গবেষণামতে, একেকজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৮০ বার ফোন খুলে দেখে। প্রতিবারই যে হাত পরিষ্কার থাকে, তা কিন্তু নয়। ফলে হাতের মাধ্যমেই মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়ে নানা পদের জীবাণু।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মহামারিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমিলি মার্টিন বলেন, ‘আমরা এমন এমন পরিস্থিতিতে ফোন চালাই, যে পরিস্থিতিতে অন্য কিছু করতে গেলে হয়তো হাত ধুয়ে নিতাম। কিন্তু ফোন ব্যবহারের সময় সেসব মাথায় থাকে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর হাতে যে ফোন থাকে, তাতে প্রায় ১৭ হাজার ব্যাকটেরিয়ার জিন বা বংশানুর খোঁজ মেলে, যা একটি সাধারণ টয়েলেট সিটে খুঁজে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার প্রায় ১০ গুণ। একটি পাবলিক টয়েলেটের সিটে সাধারণত গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ রকমের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
তবে তাই বলে যে সব জীবাণুই ভীষণ ক্ষতিকর কিংবা প্রাণঘাতী, তা কিন্তু নয়। বরং কিছু কিছু জীবাণু আমাদের শরীর থেকেই ফোনে স্থানান্তরিত হয়। প্রতিবার ফোন ঘাঁটতে গেলেই ঘামের সঙ্গে থাকা প্রাকৃতিক জীবাণু মুঠোফোনে স্থানান্তরিত হয়। এ ছাড়া অফিস কিংবা বাসার যেসব স্থানে নিয়মিত ফোন রাখা হয়, সেসব স্থান থেকে ফোনে যেসব জীবাণু প্রবেশ করে, তা নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। তবে টয়লেটের জীবাণু নিয়ে যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। টয়লেটে থাকা জীবাণু স্থানান্তরিত হতে পারে আপনার মুঠোফোনে। তাই টয়লেটে বসে ফোন চালানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
মুঠোফোনে জীবাণু থাকলেই যে তা শরীরে ঢুকে ক্ষতি করবে, ব্যাপারটা তেমনও নয়। বরং সামান্য কিছু ব্যবস্থা নিয়ে তা প্রতিহত করা সম্ভব। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত একবার ফোন পরিষ্কার করুন। এ ছাড়া যেসব উপায়ে ফোনের জীবাণু সরাসরি প্রবেশ করতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। যেমন খাওয়ার সময় বা ডাইনিং টেবিলে ফোন ব্যবহার করবেন না। রান্নাঘরে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এ ছাড়া টয়লেট ব্যবহার করে এলে বা বাইরে থেকে এলে আগে হাত ধুয়ে তারপর মুঠোফোন পরিষ্কার করুন।
তথ্যসূত্র: ইনস্টিটিউট ফর হেলথকেয়ার পলিসি অ্যান্ড ইনোভেশন, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান