মাথাব্যথা খুব সাধারণ সমস্যা। এই ব্যথা নানা ধরনের হতে পারে। যেমন উত্তেজনায় মাথাব্যথা, প্রদাহজনিত মাথাব্যথা, ট্র্যাকশন মাথাব্যথা, ভাস্কুলার ট্র্যাকশন মাথাব্যথা (মাইগ্রেন, ক্লাস্টার, টক্সিক) ও সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা। এর মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ সার্ভিকোজেনিক বা ঘাড় থেকে উৎপন্ন মাথাব্যথায় ভোগেন।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথার ক্ষেত্রে ঘাড়ের মাংসপেশি, যেমন ট্রাপিজিয়াস মাসলের ওপরের অংশ, লিভেটর স্ক্যাপুলা ও অক্সিপিটালিস মাসল খাটো হয়। ঘাড়ের ফ্ল্যাক্সর গ্রুপের মাংসপেশি, যেমন লঙ্গাস ক্যাপিটাস ও লঙ্গাস কোলাই দুর্বল হয়। ঘাড়ের অন্যান্য স্ট্রাকচার, যেমন আপার সারভাইক্যাল ফ্যাসেট জয়েন্ট, আপার সারভাইক্যাল মাসল, সি২-৩ ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক, ক্যারোটিড আর্টারি, ডুরামেটার, আপার স্পাইনাল কর্ড, ঘাড়ের পেছনে ক্রেনিয়াল ফোসা এ ধরণের মাথাব্যথা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এ ছাড়া উইফ্লাস ইনজুরি, ঘাড়ের ওপর অতিরিক্ত স্ট্রেস, ঠিক ভঙ্গিতে পড়াশোনা না করা, দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ও মুঠোফোন ব্যবহার, অফিসওয়ার্ক ও সামনের দিকে ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ ইত্যাদি থেকেও সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথা হতে পারে।
সার্ভিকোজেনিক মাথাব্যথার রোগীর ঘাড়ের পরীক্ষা করলে আপার ক্রস সিনড্রোম পাওয়া যায়। এ ছাড়া রোগীর ফরোয়ার্ড হেড পোশ্চার থাকে ও রোগীর জয়েন্ট মবিলিটি কমে যায়। ঘাড়ের ও কাঁধের বিভিন্ন মাংসপেশি শক্ত বা টাইট হয়ে যায়। মাথাব্যথার সঙ্গে অনেকের চোখ, কপাল, কানের পাশে ও থুতনিতে ব্যথা হয়। নারীরা পুরুষের চেয়ে চার গুণ বেশি এই মাথাব্যথায় ভোগেন।
চিকিৎসা কী
মাথাব্যথার ধরন অনুযায়ী চিবুক টাক ব্যায়াম, ছয়টি পয়েন্টে ডিপফ্রিকশন, ঘাড়ের সফট টিস্যু মোবালাইজেশন, স্ট্রেসিং, মায়োফেসিয়াল রিলিজ ও পোশ্চারাল কারেকশন করতে হয়। মাসল কন্ট্রোল এক্সারসাইজ, মাসলের এন্ডিওরেন্স এক্সারসাইজও রয়েছে। এর সঙ্গে লো লেভেল লেজার থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, হট বা কোল্ড থেরাপি কারও কারও প্রয়োজন হয়।
খাবারের খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে, যেমন আদার রস খালি পেটে প্রতিদিন ১ চা-চামচ, আনারসের মাঝের অংশ, কালো আঙুর/জাম, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ব্যথা থাকলে লবণ, সাদা আটা, চাল, রুটি, লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস, দুধের তৈরি খাবার ও চিনি বাদ দিতে হবে। ধূমপান ছাড়তে হবে। সঠিক দেহভঙ্গি আয়ত্তে আনতে হবে। কম্পিউটারের টেবিল–চেয়ারে পরিবর্তন করতে হতে পারে।
অধ্যাপক আলতাফ হোসেন সরকার, চিফ কনসালট্যান্ট, লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা