যেসব কারণে শীতেও হতে পারে ডায়রিয়াজনিত জটিলতা

শীতকালের ডায়রিয়া মূলত ভাইরাসঘটিত
ছবি: সংগৃহীত

শীত এলেই ঠান্ডাসহ অ্যালার্জিজনিত সমস্যা যেমন হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগের জন্য আমরা প্রস্তুত হই। এ সময় ভাইরাসঘটিত শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগও আক্রমণ করে। আবার গরম বা বর্ষাকালের রোগ ডায়রিয়া বা উদরাময়ও হতে পারে ভোগান্তির কারণ। এ সময় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ডায়রিয়া বেশি হতে দেখা যায়, তবে অন্য বয়সের মানুষও আক্রান্ত হতে পারেন।

শীতকালের ডায়রিয়া মূলত ভাইরাসঘটিত। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসজনিত সমস্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। নানা ধরনের ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোটাভাইরাস, নরোভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস, এমনকি হালের বিভীষিকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলেও রোগী জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও পাতলা পায়খানা হতে পারে। ঠান্ডা জ্বরের কারণে বিভিন্ন ওষুধের ব্যবহার হলে তা থেকেও পেটের সমস্যা হয়ে থাকে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, শীতে লোকজন বেশি ভ্রমণ করেন, বাড়ে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের নেমন্তন্ন। স্বাভাবিকভাবে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে খানিকটা লাগামছাড়া হয়ে পড়েন অনেকে। এসব কারণে গরমের মতো না হলেও শীতেও দেখা দিতে পারে ডায়রিয়াজনিত জটিলতা।

মূলত শিশু আর বয়স্কদের মধ্যে শীতকালীন ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলেই এই ব্যাপারে অধিক সচেতন থাকা জরুরি। ডায়রিয়া ও বমির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে পানিশূন্যতা রোধ করা। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, প্রচুর তরল খাবার, সঙ্গে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার চালিয়ে যেতে হবে, প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার দরকার পড়তে পারে। ভাইরাসঘটিত ডায়রিয়ায় সাধারণত বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যান। কোনো কোনো সময় আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য পাতলা পায়খানা থাকতে পারে। কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবায়োটিক বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হতে পারে। তবে, নিরাপদ পানি পান, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা বজায় রাখা, বাসি খাবার বা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা, খাবার আগে হাত ধোয়া ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই সময়ের পেটের সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিশুদের টিকা দেওয়া যেতে পারে।

*ডা. শাহনুর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ