চোখের সামনে কালো দাগ হঠাৎ মাছির মতো ঘুরে বেড়ায়। ভালো করে দেখতে গেলে সরে যায়। এসব দাগ আবার এক জায়গায় স্থির থাকে না। অনেক সময় আবার মাকড়সার জালের মতো দেখতে। চোখের এই সমস্যাকে বলা হয় ফ্লোটার।
চোখের ভেতরটা তরলে পূর্ণ আর এই তরল আবার দুই ভাগে বিভক্ত। সামনের অংশ অপেক্ষাকৃত বেশি তরল ও পেছনের অংশটি অপেক্ষাকৃত বেশি ঘন বা জেলজাতীয়। পেছন দিকের বড় অংশটিকে বলা হয় ভিট্রিয়াস কেভিটি এবং এর অভ্যন্তরে জেলের মতো বস্তুটিকে বলা হয় ভিট্রিয়াস জেল। আমিষের তৈরি একধরনের সূক্ষ্ম জালের মতো অবকাঠামো হলো ভিট্রিয়াসের মূল ভিত্তি। তার মধ্যে ইলেকট্রোলাইট, অন্যান্য উপাদান ও তরল ধারণ করে।
এই জেল এতটাই স্বচ্ছ যে এর মধ্য দিয়ে আলো নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। এই ভিট্রিয়াসের পেছনেই থাকে রেটিনা বা স্নায়ুর স্তর। কোন কারণে আমিষের এই অবকাঠামোতে গুণগত মানের এমন পরিবর্তন হতে পারে, যেখানে আমিষ কণাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বড় দানায় পরিবর্তিত হয়। এ ক্ষেত্রে আলোকরশ্মি বাধাপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ, আলোকরশ্মি চোখে আপতিত হওয়ার সময় এই সব আমিষকণায় বাধাপ্রাপ্ত হলে রেটিনায় এর ছায়া বা শেড পড়ে। এই ছায়া বা শেড কালো দাগের মতো দেখায়। এটিই ফ্লোটার।
মেকুলার ডিজেনারেশন: এটিকে চোখের বা রেটিনার বার্ধক্যও বলা যেতে পারে। সাধারণত বয়সের কারণে, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে রেটিনা ও ভিট্রিয়াস জেলের অবকাঠামোগত পরিবর্তন সাধিত হয়। ভিট্রিয়াসে পার্টিকেল বা দানা পড়ে। এতে রেটিনায় এর ছায়া পড়ে এবং ফ্লোটারের সৃষ্টি হয়।
প্রদাহের কারণ: পোস্টিরিয়র ইউভিয়াইটিস বা ভিট্রিয়াস জেলের প্রদাহের কারণেও ভিট্রিয়াসে বিভিন্ন ধরনের কোষ একসঙ্গে জটলা পাকিয়ে থাকে। এতে আলোকরশ্মির নির্বিঘ্ন যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয় ও ফ্লোটারের অনুভূতি হয়।
রেটিনোপ্যাথি বা আঘাত: এ কারণে চোখের ভেতর হালকা রক্তক্ষরণ হলে সেখানেও ফ্লোটার দেখা দিতে পারে।
ডিজেনারেটিভ মায়োপিয়া বা দূরদৃষ্টি: এ সমস্যা যাদের থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ফ্লোটার দেখা দিতে পারে।
চোখের সামনে কালো স্পট বা ছায়া: কোনো কোনো সময় বিশেষ করে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড বা দেয়াল বা স্বচ্ছ আকাশের দিকে তাকালে হঠাৎ কালো দাগ বা মাছি, অনেক সময় মাকড়সার জালের মতো বস্তু দৃষ্টিগোচর হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ভালো করে দৃশ্যমান করতে চাইলে আবার মিলিয়ে যায়। এটি স্থিরও থাকে না।
এটি তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তাই বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ভালো হয় যদি উপেক্ষা করেন। বারবার দেখার চেষ্টা না করা উচিত।
ঘুম ও পানি পানে যত্নবান হতে হবে।
বিশ্রাম ও প্রশান্তি সুফল দিয়ে থাকে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্লোটার ক্ষতিকর নয়। তবে কখনো কখনো এটি জটিলতার পূর্বাভাস। ফ্লোটার হলে একবার অন্তত চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। বিশেষ করে যখন হঠাৎ করে অনেক বেশি পরিমাণে বড় বড় কালো দাগ দেখা দেয় বা সঙ্গে আলোর ঝলকানির মতো হয় এবং সঙ্গে মৃদু ব্যথা ও দৃষ্টি সমস্যা অনুভূত হয়।
ডা. মো. ছায়েদুল হক: কনসালট্যান্ট (চক্ষু), আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা