বিশাল সমুদ্রের দীর্ঘ তটে দুই চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন ছবি কল্পনা করতেও মনে লাগে প্রশান্তির পরশ। হালের ভ্রমণপিয়াসীরা হাওরের বুকেও রাত কাটান। রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ আবার পাহাড়ি শ্যামলিমায় দুর্দান্ত কোনো অভিযানে গিয়ে সন্ধান করেন অপূর্ব কোনো ঝরনা। কেউ আবার চান গ্রামীণ জীবনের স্বাদ। নিঝুম কোনো দুপুরে মন কেমন করা কোনো অচিন পাখির ডাক নিঃসন্দেহে শহুরে জীবনের ক্লান্তিমোচনের দারুণ এক টোটকা।
নাগরিক কোলাহল আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণে তো নিশ্চয়ই যাবেন। কিন্তু যাত্রাপথে আপনার যদি বমির প্রবণতা থাকে কিংবা বমি বমি ভাবই যদি হয় আপনার ভ্রমণসঙ্গী, তাহলে বোধ হয় এমন সব প্রশান্তিদায়ক চিত্রের আগে মনে দুর্ভোগের চিত্রটাই ফুটে উঠবে। তবে এ প্রবণতা কমানোর কিছু উপায়ও রয়েছে।
কোন খাবার খাবেন, কোনটা খাবেন না
ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান জানালেন, ভ্রমণে বমির প্রবণতার সঙ্গে সরাসরি খাবারদাবারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যাঁরা এ দুর্ভোগ পোহান, তাঁদের এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা খেলে বমির প্রবণতা বাড়তে পারে। বমির প্রবণতা থাকলে ভ্রমণের আগে কিংবা ভ্রমণের সময় তৈলাক্ত খাবার, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এবং ডিম না খাওয়াই ভালো। যেসব খাবারে আপনার অ্যাসিডিটি হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। বরং খেতে হবে শুকনা ও হালকা খাবার। যাত্রা শুরুর আগে খেতে পারেন চিড়া, মুড়ি বা বিস্কুট (যেমন টোস্ট বিস্কুট)। তবে ক্রিম বিস্কুট নয়। যাত্রাবিরতিতে খিচুড়ি, বিরিয়ানি, পরোটা কিংবা বার্গার-স্যান্ডউইচজাতীয় খাবার না খেয়ে বেছে নিন শুকনা খাবার, ফলের রস কিংবা কোনো টক ফল। খাবারের পরিমাণটা হতে হবে অল্প। আর ভ্রমণের সময় হাতে রাখতে পারেন লেবু পাতা বা কমলার মতো হালকা ঘ্রাণের কিছু, এতে বমির ভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।
কখন খাবার খাবেন, কখন ওষুধ
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট তাসনোভা মাহিন জানালেন, ভ্রমণে বমির প্রবণতা কমাতে যাত্রা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই খাওয়াদাওয়া শেষ করে ফেলতে হবে। ভ্রমণের আগে ও যাত্রাবিরতিতে খেতে হবে সহজপাচ্য খাবার এবং খাবারটা পরিমাণেও অল্প হতে হবে। বমির প্রবণতা কমানোর ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়লে সেটিও যাত্রা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই খেয়ে ফেলুন। প্রয়োজন হলে ওষুধের বাড়তি একটি ডোজও সঙ্গে নিন; মাঝপথে কোথাও বিরতি নিয়ে খাবার খাওয়া হলে তার আধঘণ্টা আগেই এই বাড়তি ডোজটি নিয়ে নিন।
আরও কিছু সতর্কতা
ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাইফ হোসেন খান বলেন, যাঁদের ভ্রমণে বমি হওয়ার প্রবণতা থাকে, তাঁদের জন্য যানবাহনের প্রথম দিককার আসন ভালো। পেছনের দিকে ঝাঁকুনি বেশি অনুভূত হওয়ার কারণে বমির প্রবণতা বাড়তে পারে। সম্ভব হলে ভ্রমণের সময় জানালার পাশের আসন বেছে নিন। বাইরের বাতাস শরীরে লাগলে বমিভাব খানিকটা কম হয় বলেও জানালেন তিনি।
ভ্রমণের সময় মুঠোফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কিংবা বই পড়লে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই ওই সময়টুকুর জন্য এসব থেকে দূরে থাকাই ভালো।