বাসায় এমন সব জিনিস থাকে, যেগুলো অজান্তেই হয়ে ওঠে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এমনই তিনটি জিনিসের কথা জেনে নেওয়া যাক।
১. চিড় ধরা বা দাগ হয়ে যাওয়া নন–স্টিক প্যান
রান্নার সময় তেল কম লাগে, সময় কম লাগে, পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম, সহজে প্যানের সঙ্গে কিছু আটকে বা লেগে যায় না, পরিষ্কার করাও সহজ—এ রকম নানা কারণে নন–স্টিক বাসন ভীষণ জনপ্রিয়। তবে রান্নার এই অনুষঙ্গ ব্যবহার করতে হয় খুব সাবধানে। আর নষ্ট হয়ে গেলেই তা বাদ দিয়ে দিতে হবে। কেননা চিড় ধরা বা দাগ পড়া নন-স্টিকের প্যান থেকে একবার রান্না করলে গড়ে ১০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। এগুলোকে বলা হয় পার ও পলি ফ্লুওরিনেটেড সাবস্টেন্স (পিওএফএস)। একটি চিড় ধরা নন–স্টিকের প্যান থেকে গড়ে ২৫ লাখ মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক উঠে মিশে যেতে পারে খাবারের কণার সঙ্গে।
আর এ ধরনের জটিল প্লাস্টিক যৌগ একধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা কখনো পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় না। অর্থাৎ একবার শরীরে ঢুকে পড়লে তা প্রাণীদেহে জমা হতে থাকে। এমনকি মস্তিষ্কেও জমা হয়। কখনোই বের হয়ে যায় না। তাই তাদের বলা হয় ‘ফরএভার কেমিক্যাল’ বা ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’। এগুলো শত শত বছর ধরে মাটিতে, পানিতে থেকে যায়। এগুলো শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় জমা হলে মানুষের বিপাকীয় কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ওজন বেড়ে যায়। বাড়ে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের ঝুঁকি। প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। মানে কমে যেতে পারে সন্তান ধারণক্ষমতা। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কমে যায়।
রান্নার সময় ও পরিষ্কার করার সময় যেন নন-স্টিক পাত্রের উপরিতলে কোনো ধরনের আঁচড় না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কোনো ধরনের আঁচড় পড়লে পাত্রটি অবশ্যই বদলে ফেলতে হবে। নন-স্টিক প্যানের বদলে স্টেইনলেস স্টিল, দস্তা বা লোহার পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
২. সুগন্ধি মোমবাতি
অনেকের বাসায় ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’ বা কেবল সাধারণ অন্দরসজ্জার জন্য থাকে সুগন্ধি মোমবাতি। কেমিক্যাল ব্যবহার করে তৈরি সুগন্ধি মোমবাতিতে সাধারণত থ্যালেট থাকে। থ্যালেট আমাদের শরীরের থাইরয়েড ও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। আপনার বাসায় এ রকম মোমবাতি থাকলে সেটি আপনার অজান্তেই হাঁপানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে আর নারী-পুরুষনির্বিশেষে ক্ষতি করছে প্রজননতন্ত্রের। এ ধরনের মোমবাতি ঘরে থাকলে আজই ফেলে দিন। মোমবাতি কেনার সময় সেখানে থ্যালেট আছে কি না, খেয়াল রাখুন।
প্রাকৃতিক সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি ব্যবহার করতে পারেন। সয়া বা মৌমাছির বাসা থেকে তৈরি মোমবাতি ব্যবহার করুন। প্রাকৃতিক মোমবাতি কিনে সেটাকে বিভিন্ন ঘরোয়াপদ্ধতিতে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি বানাতে পারেন।
সাধারণ ফ্রিজের ডোর গ্যাসকেট-এও অনেক সময় থ্যালেট থাকে। তাই ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি লক্ষ রাখুন।
৩. প্লাস্টিকের চপিং বোর্ড
অনেকের বাসায় প্লাস্টিকের চপিং বোর্ড থাকে। সময়ের সঙ্গে চাকুর আঘাতে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই ক্ষতিগ্রস্ত বোর্ডে যখন কিছু কাটা হয়, তখন তাতে সরাসরি মাইক্রোপ্লাস্টিক চলে যায়। এসব প্লাস্টিকের কণার প্রভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মানবদেহ। হতে পারে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হরমোনের সমস্যা। শিশুদের বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণও হতে পারে এসব প্লাস্টিক কণা। তাই কাঠের চপিং বোর্ড ব্যবহার করাই সমীচীন।
বাসাবাড়িতে প্লাস্টিক যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। বিশেষ করে খাবার–সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনে প্লাস্টিক ব্যবহার না করাই সমীচীন। অনেকে ওয়ান টাইম কাপে চা/কফি খান। এটা মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুর অনেক খেলনা প্লাস্টিকে তৈরি। আর শিশু সেগুলো খেলতে খেলতে মুখে দিতেই পারে। প্লাস্টিকের পাত্রে শিশুকে খাওয়াবেন না। প্লাস্টিকের কৌটায় ঘি, মধু, তেল-মসলা রাখবেন না।
সূত্র: ডা. সৌরভ শেঠির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল