স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া

ত্বকের একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস। পরিবারের একজনের হলে অন্যদের দেহেও সংক্রমিত হয়। সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা, সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ ছাড়া এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ কঠিন।

স্ক্যাবিস রোগকে বাংলায় বলে খোসপাঁচড়া। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই নামক জীবাণু এ রোগের কারণ। এর প্রধান লক্ষণ শরীরে চুলকানি ও দানা বা বিচির মতো র‍্যাশ ওঠা, যা পারস্পরিক স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তা ছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।

স্ক্যাবিস একটি অণুজীব, একটি ক্ষুদ্র পোকা, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এরা সারা বছর প্রজনন করতে পারে, শীতল পরিবেশে প্রজনন দ্রুততর হয়।

ত্বকের অন্যান্য সমস্যা, যেমন অ্যালার্জি, একজিমা বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে স্ক্যাবিস আলাদা। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই মাইট (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু) ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

স্ক্যাবিসে আক্রান্ত কীভাবে বুঝবেন

প্রথমেই কিছু পানিপূর্ণ ছোট ছোট দানা বা বিচি হয়। এটি চুলকালে দ্রুত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়। রাতে বেশি চুলকানি অনুভূত হয়। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, ত্বকের ভাঁজে, বুকে-পিঠে, বগলে, যৌনাঙ্গে বা এর আশপাশে, নাভি ও নাভির চারদিকে ছোট ছোট দানা বা বিচি দেখা দেয়। এ ছাড়া সারা শরীরে দেখা দিতে পারে।

নবজাতক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচেও হয়ে থাকে। স্কুল, মাদ্রাসা, মেস বা অনান্য আবাসিক এলাকা, যেখানে একত্রে একাধিক লোক থাকে, সেখানে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়।

কী করবেন

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। ২. পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে সবার চিকিৎসা নিতে হবে। ৩. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, আন্ডার গার্মেন্টস ইত্যাদি গরম পানিতে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। ৪. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার না করা উচিত। ৫. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে চর্মরোগের ওষুধ বা চিকিৎসা নেওয়া ঠিক নয়। ৬. আবাসিক হল বা মেসে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আলাদাভাবে বা সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে।

চিকিৎসা কী

পরিবারের সবার বয়স ও ওজন অনুযায়ী আলাদা ওষুধ সেবন করতে হয়। পারমিথিন ৫ শতাংশ ক্রিম এবং মনোসালফিরাম সলিউশন নির্দেশিত নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। সংক্রমণ না হলে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার দেওয়া হয়।

  • ডা. জাহেদ পারভেজ: সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা