গর্ভধারণের জন্য ভালো সময় কোনটি

গর্ভধারণ করা নিয়েও চাপ নেওয়া যাবে না এবং সহবাসের সময়ও থাকতে হবে দুশ্চিন্তামুক্ত।
প্রতীকী ছবি

গর্ভধারণ নিয়ে আমাদের সমাজে এখনো অনেক ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। যেমন, রাতের দ্বিতীয় প্রহরে স্বামী–স্ত্রীর সহবাস করা ভালো কিংবা মাসিকের পর বিরতি দিয়ে সহবাস করা ভালো—এমন আরও অনেক কিছু।

এসব কথার আদৌ কোনো ভিত্তি আছে কি না, জানতে চাইলে গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, ‘মাসিক শুরু হওয়ার ১২তম দিনের পর যে সপ্তাহ শুরু হয়, সেটাকেই আমরা গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বলে থাকি। সন্তানধারণের ইচ্ছা থাকলে ওই সপ্তাহেই নিয়মিত স্বামীর সঙ্গে সহবাসে যাওয়া ভালো।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েবমেড থেকে জানা যায়, গর্ভধারণের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অবশ্যই জরুরি। তবে যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা যখন সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করবেন, তখন অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না।

জীবন থেকে কমাতে হবে দুশ্চিন্তাও। কারণ, মানসিক চাপ নারীর শরীরে ডিম্বাণু তৈরিতে বিঘ্ন ঘটায়। তাই গর্ভধারণ করা নিয়েও চাপ নেওয়া যাবে না এবং সহবাসের সময়ও থাকতে হবে দুশ্চিন্তামুক্ত।

এদিকে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার শুরুতেই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। যেমন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, রক্তের হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি। আবার গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগেই কারও ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, অতিরিক্ত ওজন গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ থেকে একল্যামশিয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, ডায়াবেটিসের সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

এ ছাড়াও যদি কারও মাসিক নিয়মিত না হয়, তাহলে গর্ভধারণ করার আগে মাসিক নিয়মিত করার চিকিৎসা করতে হবে বলে জানান ডা. তানজিনা হোসেন। কারণ, মাসিকের চক্র ঠিক না থাকলে ডিম্বাণু তৈরিতে সমস্যা হয়। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার শুরু থেকেই সাপ্লিমেন্ট আকারে ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করা উচিত বলে জানান তিনি।

গর্ভধারণের সবচেয়ে ভালো সময় ধরা হয় ২৫ বছরের মধ্যে। সেটা সম্ভব না হলে অন্তত ৩০ বছরের আগে প্রথম সন্তান নিয়ে নেওয়া উচিত।

এরপর প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সেলিংয়ের ওপর জোর দিলেন ডা. তানজিনা।

কোনো দম্পতি যদি ছয় মাস থেকে এক বছর স্বাভাবিক উপায়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে না পারেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সে সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভধারণ করতে চাইলে জীবনযাপনে কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, কোনো নারী যখন বুঝতে পারেন যে তিনি গর্ভধারণ করেছেন, তত দিনে কিন্তু ভ্রূণের বয়স ছয় থেকে আট সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। কিছুটা শারীরিক অবয়বও তৈরি হয় তার। তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার শুরু থেকেই যেকোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথার ওষুধের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুই খাওয়া যাবে না।

অনেকেরই শরীরে পুরোনো অনেক রোগ থাকে, যেগুলোর জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। সে ক্ষেত্রে গর্ভধারণের জন্য যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে। নিয়মিত ওষুধটি গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ কি না, তা জেনে নিতে হবে।

এর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত খাবার ও বাইরের খাবার এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন ডা. তানজিনা হোসেন। তার বদলে তাজা সবজি ও আমিষযুক্ত খাবার খাওয়ার কথা বলেন তিনি।