শীত প্রায় এসে পড়েছে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে শিশু–বৃদ্ধ অনেকেই সর্দিকাশির সমস্যায় ভোগেন; বুকে কফ জমে যায়। খুক খুক কাশতে থাকেন সকাল–বিকেল। সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকে জমে থাকা কাশি বা কফ নির্মুলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। কিন্তু সব কাশির ক্ষেত্রে কি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন আছে? জেনে নিন শীতের কাশির কয়েকটি সাধারণ কারণ এবং প্রতিকারগুলো...
ভাইরাসের সংক্রমণ: কাশির প্রধান কারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। শীতে ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার পরিবেশ পায় বলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কাশির সঙ্গে পাতলা কফ বেরোতে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি। ভাইরাল সংক্রমণের কাশিতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: এ সময় ব্যাকটেরিয়াজনিত ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হতে পারে, যার ফলে কাশি হতে পারে। এক্ষেত্রে হলুদ রঙের ঘন কফ বেরোতে পারে, জ্বর হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
পরিবেশগত কারণ: শীতকালে দরজা-জানলা বন্ধ থাকার কারণে ধোঁয়া ধুলাবালির মতো দূষণকারী উপাদানে কাশির সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে যে কফ তৈরি হয়, সেখানে পাতলা শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ দেখা যায়।
অ্যালার্জি: শীতকালে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, ফলে পাতলা কফের কাশি দেখা দিতে পারে। হাঁপানিতে যাঁরা ভুগছেন, শীতকালে তাঁদেরও কাশির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস: ধূমপায়ীদের ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরপর দুই বছরের প্রতিটি বছরে পরপর তিন মাস কাশি ও কফ হয়। এ ধরনের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসা নিন। শীতকালে এসব রোগীর সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে কাশির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
প্রচুর পরিমাণে তরল খান, যেমন গরম পানি, ভেষজ চা, স্যুপ।
শ্বাসনালীর আরামে এবং শ্লেষ্মা আলগা করতে নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিন, এমনকি গরম পানিতে গোসল করতে পারেন।
পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খান; লেবুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, এ ছাড়া আছে ভিটামিন সি।
শ্বাসনালীকে আর্দ্র রাখতে শোবার ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
কাশি কমাতে রাতে শোয়ার সময় একটি অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে শুতে পারেন, বিশেষ করে যদি আপনি জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন।
কাশিতে আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। বিশ্রাম শরীরের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে শক্তি যোগায়।
ধূমপান পুরোপুরি পরিহার করুন।
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার কমাতে নিয়মিত হাত ধোওয়ার অভ্যাস করুন।
ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার জন্য টিকা নিশ্চিত করুন।
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে শীতকালীন কাশির সমস্যা নিরসনে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ডা. নওসাবাহ্ নূর: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকাল কলেজ, ঢাকা