শিশুর মুখের মিষ্টি আধো বোলে আমাদের চেনা বহু শব্দই অন্য রকম শোনায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা যে শব্দ শোনে, তা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে কাছাকাছি কোনো শব্দ উচ্চারণ করে। তবে পানি বা জল শব্দ দুটির সঙ্গে ‘মাম’ শব্দটির কোনো মিল না থাকলেও অনেক শিশুই পানিকে ‘মাম’ বলে। আবার সব শিশুই যে পানিকে ‘মাম’ বলে, সেটাও নয়। কেউ কেউ পানি বা জলও বলতে শিখতে পারে।
সাধারণত শিশুর মুখে প্রথমে ‘দা’–জাতীয় বুলি ফোটে। এ কারণে ‘দাদা’ শব্দটি অনেক শিশুর মুখের প্রথম অর্থপূর্ণ শব্দ। ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় যে দাদাকে বেশি ভালোবেসে প্রথম ডাকের জন্য দাদা শব্দটি বেছে নেয় তারা। ‘দা’ কিংবা ‘তা’–জাতীয় বুলি ছাড়াও ‘বাবা’ কিংবা ‘বাব্বা’ বলতে শেখে শিশু। ‘মা’, ‘মাম্মা’ কিংবা ‘মামা’ শব্দগুলো শিশুর মুখে উচ্চারিত হয় আরও পরে। তবে কারও কারও মুখে ‘ম’ ধ্বনিটিও প্রথমে উচ্চারিত হতে পারে। এসব বিষয় শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথে ধাপে ধাপে ঘটতে থাকে।
যে বয়সে সে ‘মা’, ‘মাম্মা’ কিংবা ‘মামা’ উচ্চারণ করতে পারে, স্বাভাবিকভাবেই সেই বয়সে সে ‘মাম’ শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারে। প্রশ্ন হলো, ‘মাম’ শব্দটি উচ্চারণ করতে সক্ষম হওয়ার পর কেন সে পানি বা জল বোঝাতে এই শব্দকে বেছে নেয়?
পানি কিংবা জলের মতো একাধিক ভিন্নধারার বর্ণসংবলিত শব্দ উচ্চারণ করা ছোট্ট শিশুর জন্য কিছুটা কঠিন। এসব শব্দ উচ্চারণের চেয়ে ‘মাম’ তার জন্য অনেক বেশি সহজ। অনেক অভিভাবকই শিশুর সামনে পানিকে ‘মাম’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ, তিনি নিজেও বহু শিশুকে পানি শব্দটি বোঝাতে ‘মাম’ বলতে শুনেছেন। ‘মাম খেয়ে নাও’–জাতীয় বাক্য বলা হলে শিশু খুব স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেবে, তার সামনে আনা এই ‘বস্তু’র নাম ‘মাম’। আর ‘মাম’ পেলেই মেটে তৃষ্ণা।
তাই তৃষ্ণা লাগলে সে ‘মাম মাম’ বলে তার তৃষ্ণার কথা জানান দেয়। তৃষ্ণা না লাগলেও অবশ্য সুন্দর পানির পাত্রের আকর্ষণে শিশু ‘মাম মাম’ বলতে পারে। যে কারণেই শিশুটি ‘মাম’ চেয়ে থাকুক না কেন, অভিভাবকেরা স্বাভাবিকভাবেই তার চাওয়া পূরণ করতে পানির পাত্রটি এগিয়ে দেন সামনে। ফলে এটিই যে ‘মাম’, সে ধারণাও পোক্ত হয় শিশুর মধ্যে। শিশুটিকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হলেও একই ঘটনা ঘটে। প্রয়োজনমতো ‘মাম’ কথাটি উচ্চারণ করে সে। এমনকি পরিবারের বাইরের মানুষেরাও বুঝে নেন, শিশুটি পানির কথাই বলছে। বহু পরিবারেই এমনভাবে পানিকে ‘মাম’ বলে শিশুরা। শিশুর মুখের এক স্বতঃস্ফূর্ত বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মাম’।