কে না জানেন, অসুখ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়! কিন্তু কোন ধরনের সমস্যায় কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, তা নিয়ে দ্বিধায়ও পড়েন কেউ কেউ।
রোগী কিংবা রোগীর স্বজন হিসেবে আপনার প্রথমেই জানার কথা নয়, কোন রোগে ভুগছেন আপনি (বা আপনার আপনজন)। আপনি কেবল কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারেন। এই কষ্টই হলো ‘উপসর্গ’, চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যা আপনাকে বলতে হবে। উপসর্গ হতে পারে হাজারো রকম। এর মধ্যে এমন অনেক উপসর্গ আছে, যার উৎপত্তি হতে পারে শরীরের একেবারেই আলাদা আলাদা অংশের কোনো একটিতে। এই যেমন মাথা ঘোরানো। কারও মাথা ঘোরানোর কারণ হলো তাঁর রক্তচাপ, কারও রক্তশূন্যতা থাকলে তাঁরও মাথা ঘোরাতে পারে, আবার কানের সমস্যায়ও মাথা ঘোরায়। বড্ড মুশকিল! আপনি তাহলে যাবেন কার কাছে? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ না কি নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ? আবার একজন রোগীর যে কেবল একটি উপসর্গই থাকে, তা–ও নয়। একাধিক উপসর্গের প্রতিটির জন্য কি তাহলে আলাদা আলাদা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
ঘাবড়াবেন না। সমস্যায় না পড়ে যেন সহজে বুঝতে পারেন, কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, তার জন্যই এই লেখা।
হঠাৎ শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা খিঁচুনির মতো সমস্যায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। এগুলো স্ট্রোকের উপসর্গ হতে পারে। দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক জটিলতা এড়ানো যাবে। তবে সে জন্য আপনার জানা থাকতে হবে, আপনার নিকটস্থ কোন হাসপাতালে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এই বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, রক্তজমাট বেঁধে স্ট্রোক হলে আপনাকে চিকিৎসা দেবেন নিউরোমেডিসিন (স্নায়ুরোগ) বিশেষজ্ঞ এবং রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হলে আপনার চিকিৎসা করবেন একজন নিউরোসার্জন। এই দুই বিভাগের চিকিৎসকের কাছে আপনি চিকিৎসা পাবেন অবশ্যই। কিন্তু যে আধুনিক চিকিৎসা দ্রুততম সময়ে শুরু করতে হয়, তা বাংলাদেশের গুটিকয়েক হাসপাতালেই রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে পৌঁছতে না পারলে কিন্তু মূল্যবান ‘সময়’ হারিয়ে যাবে রোগীর জীবন থেকে। কোনো বিশেষজ্ঞই এই সময়কে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।
শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, প্রচণ্ড পেটব্যথা, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, রক্তবমি কিংবা অস্বাভাবিক রক্তপাত, আকস্মিক দুর্ঘটনা প্রভৃতি হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই যেতে হবে।
বিশেষজ্ঞের চেম্বারে ‘লাইন’ ধরে বসে থাকলে রোগীর কষ্টই বাড়বে। গভীর রাত কিংবা ছুটির দিনেও জরুরি সেবা অব্যাহত রাখেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞদের পাবেন কি না, এমন ভাবনায় চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না।
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেহের প্রতিটি অংশের চিকিৎসা দিতে পারেন (সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের বিষয়াদি বাদে)। জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কাশি, পেটব্যথা ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ নিয়েই তাঁদের কাছে যাওয়া যেতে পারে। তবে প্রয়োজনে তাঁরা আপনাকে নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েও দিতে পারেন।
কাশি বা শ্বাসকষ্টের জন্য বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, কেবল ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই শ্বাসকষ্ট হয় না। হৃৎপিণ্ডের সমস্যাতেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনকি রক্তশূন্যতার রোগীও একপর্যায়ে শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। তাই বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে বলতে পারেন।
হৃদ্রোগের জন্য হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) যেমন রয়েছেন, তেমনি হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচারের জন্য কার্ডিয়াক সার্জনও রয়েছেন।
পেটব্যথা, অ্যাসিডিটি, বমি, পাতলা পায়খানার জন্য যেতে পারেন পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে। রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিংবা কালো পায়খানা হবার মতো উপসর্গেরও চিকিৎসা করবেন তিনি।
হাড় ভেঙে বা মচকে গেলে কিংবা হাড়ে টিউমারজাতীয় কিছু দেখা দিলে অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার জন্য যেতে পারেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে (ফিজিওথেরাপিস্ট নয়)। জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, এমন নির্দিষ্ট কিছু রোগের জন্য রিউমাটোলজিস্টের কাছেও যেতে হতে পারে।
নখ উপড়ে গেলে, পায়ুপথের সমস্যা কিংবা দীর্ঘমেয়াদী কোষ্টকাঠিন্য হলে জেনারেল সার্জনের কাছে যেতে পারেন। পাঁজরে আঘাতের জন্য প্রয়োজন থোরাসিক সার্জন।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে, মুখ ফুলে গেলে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। পেট ফোলা বা রক্তবমির মতো সমস্যা হতে পারে লিভারের সমস্যায়। লিভারের সমস্যা ধরা পড়লে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
প্রস্রাব করতে অসুবিধা হলে, অল্প অল্প করে প্রস্রাব ঝরলে ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন।
মাসিক অনিয়মিত হলে হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিসের জন্যও তাঁরাই বিশেষজ্ঞ।
রক্তরোগ (রক্তের ক্যানসারসহ) চিকিৎসা দেন হেমাটোলজিস্ট। অন্যান্য ক্যানসারের চিকিৎসা দেন অনকোলজিস্ট।
আরও যা
শিশুদের জন্য যেমন পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ, তেমনি বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য আছে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ।
শিশুদের কিডনির রোগ, স্নায়ুরোগ, রক্তরোগ, সার্জারি প্রভৃতির জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।
আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও যদি অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে, তাহলে এন্ডোস্কপি এবং কোলনস্কপি পরীক্ষার জন্যও আপনাকে পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হতে পারে।
কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, তা বুঝতে না পারলে আপনার নিকটস্থ এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।