ভেষজ ওষুধ হিসেবে হলুদ খুবই জনপ্রিয়। সাধারণত কাঁচা হলুদের ঔষধি গুণই বেশি। কিন্তু নারী-পুরুষনির্বিশেষে যে কেউই কি কাঁচা হলুদ খেতে পারবেন?
হজমের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন
যাঁদের হজমের সমস্যা আছে, তাঁরা সতর্কতার সঙ্গে খাবেন। কারণ, হলুদে রয়েছে পলিফেনলস বা কারকিউমিন নামক উপাদান। ফলে এটি সহজে হজম হয় না। তবে সঙ্গে গোলমরিচ ব্যবহার করলে হজমপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
অন্তঃসত্ত্বা মা
কাঁচা হলুদ জরায়ু সংকোচন প্রসারণে সাহায্য করে। ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা আছে।
অ্যান্টিক্যানসার ওষুধ খাচ্ছেন যাঁরা
হলুদ ক্যানসার নিরাময়ে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনি অ্যান্টিক্যানসারের কিছু ওষুধ আছে হলুদ সেবনের ফলে সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়। তাই অ্যান্টিক্যানসার ওষুধ সেবনকারী কাঁচা হলুদ সেবন করতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধ সেবন করছেন যাঁরা
কাঁচা হলুদ কিছু মুখে খাওয়ার অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের হলুদ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।
অল্প কিছুদিনের মধ্যে যাঁরা সন্তান নিতে চান
কাঁচা হলুদ টেস্টোস্টেরন হরমান কমায় সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুকে অচল করে দেয়। অল্প দিনের মধ্যে যাঁরা বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন, তাঁদের কাঁচা হলুদ সেবন করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
২ সপ্তাহের মধ্যে যারা কোন অপারেশন করবেন
হলুদ রক্ত জমাটবাঁধার যে স্বাভাবিক প্রবণতা, তা হ্রাস করে। ফলে ২ সপ্তাহের মধ্যে যাঁরা অপারেশন করবেন, হলুদ গ্রহণের ফলে অপারেশনে তাঁদের অধিক রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একই কারণে যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁরাও কাঁচা হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
যাঁরা ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করেন
হলুদ তার অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্ষমতার জন্য কাঁটা স্থান ও ক্ষতস্থানের ব্যথা উপশম করে। আবার বিভিন্ন ব্যথার ওষুধের কার্যকারিতাও হ্রাস করে।
লিভার সমস্যায় আক্রান্ত রোগী
কাঁচা হলুদ সহজে হজম হতে চায় না। আর যেহেতু লিভার সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর হজমের জন্য যে এনজাইম দরকার, তার স্বল্পতা থাকে তাই এ ধরনের রোগীদের কাঁচা হলুদ সেবন থেকে বিরত থাকাই উচিত। কিন্তু যাঁদের লিভারে চর্বি জমেছে, তাঁরা হলুদ খেতে পারবেন; কারণ, হলুদ চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে
হলুদ সেবনে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
স্তন, জরায়ুর ক্যানসারে যাঁরা ভুগছেন
হরমোনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু ক্যানসার যেমন স্তন, জরায়ুর ক্যানসারে হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
দৈনিক এক গ্রাম হলুদ গ্রহণ করা যায়। আমরা মসলা হিসেবে যে হলুদ ব্যবহার করে থাকি, দৈনিক চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, স্মৃতিবর্ধকসহ আরও নানাবিধ গুণাবলি আছে। তবে মসলা ছাড়াও অতিরিক্ত হলুদ খাওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শিমু আক্তার, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক বিভাগ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর