ডায়াবেটিসের রোগীদের নিয়মিত রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) মাপা অপরিহার্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দূর করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার খুবই প্রয়োজন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাচ্ছে কি না, চিকিৎসার ধরন নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ঘরে বসে এক ফোঁটা রক্তের সাহায্যে গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের সুগার মেপে নিতে পারেন।
কতবার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে, তা নির্ভর করে—
ডায়াবেটিসের ধরন
কী চিকিৎসা পাচ্ছেন (ইনসুলিন, না মুখের ওষুধ)
অন্য কোনো অসুস্থতা আছে কি না
গর্ভধারণ
এ ধরনের রোগীদের শুধু ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এদের দিনে চার থেকে ছয়বার, অনেক সময় দশবার পর্যন্ত ব্লাড সুগার চেক করতে বলা হয়।
নাশতা ও খাওয়ার আগে
ব্যায়ামের আগে ও পরে
ঘুমানোর আগে
কখনো কখনো শেষরাতে
রক্তে শর্করা অতিরিক্ত বেশি বা অতিরিক্ত কম হয়ে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া/হাইপারগ্লাইসেমিয়া) উপসর্গগুলো অনুভব করলে
ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্যের সময়
যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন—
সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন
কোনো দিন সকালের নাশতার আগে ও পরে
এক দিন দুপুরের খাবারের আগে ও পরে
অন্য দিন রাতের খাবারের আগে ও পরে
রাতে ঘুমানোর আগে
ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্যের সময়
যাঁরা ওষুধ খাচ্ছেন—
দৈনিক বা সপ্তাহে কয়েকবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ অনুযায়ী
সাধারণত সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার
কোনো দিন সকালে খাওয়ার আগে এবং নাশতার দুই ঘণ্টা পরে
কোনো দিন রাতের খাওয়ার আগে
ব্যায়াম করার আগে (বিশেষ করে সালফোনাইল গ্রুপের ওষুধ খেলে)
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে—
সপ্তাহে অন্তত এক দিন
সকালের নাশতার আগে-পরে, দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর গ্লুকোজ মাপতে হবে
ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষা কখন প্রয়োজন
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা ওষুধের কমবেশি করার সময় নিয়মিত দিনে ৪ থেকে ৬ বার রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন
জ্বর, ডায়রিয়া এ ধরনের কোনো অসুস্থতায় ভুগলে
স্বাভাবিক রুটিনের ব্যত্যয় ঘটলে
ডায়াবেটিসের নতুন কোনো ওষুধ শুরু করলে
রক্তে গ্লুকোজ–স্বল্পতার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কোনো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা করতে হবে
কখন করবেন: নাশতার আগে এবং দুই ঘণ্টা পরে, দুপুরে খাওয়ার আগে এবং দুই ঘণ্টা পরে, রাতের খাবারের আগে এবং দুই ঘণ্টা পরে
গ্লুকোজের মাত্রা কত থাকা প্রয়োজন
আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ার আগে প্রতি লিটারে ৪.২ থেকে ৭.২ মিলিমোল এবং খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ১০ মিলিমোলের নিচে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা রাখা উচিত
সহজভাবে রোগীদের আমরা বলে থাকি ব্লাড সুগার টার্গেট হবে ৬, ৭, ৮। খালি পেটে ৬, ৩ মাসের গড় HbA1c ৭, খাওয়ার পর ৮।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন বয়স, অন্যান্য অসুখ, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, গর্ভাবস্থা, কিডনির জটিলতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্নতর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতে হবে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত একটি ব্লাড সুগার ডায়েরি রাখার গুরুত্ব অপরিসীম
ব্লাড সুগার মেপে নিয়মিত সময় ও তারিখ অনুযায়ী ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন
যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন, ব্লাড সুগারের সঙ্গে ইনসুলিন কত ডোজ করে নিচ্ছেন, লিখে রাখবেন
ব্লাড সুগার অনেক বেড়ে বা কমে উপসর্গ দেখা দিলে তা মেপে তাৎক্ষণিক লিখে রাখবেন
চিকিৎসকের কাছে ব্লাড সুগার ডায়েরি নিয়ে যান। সেখানে প্রদর্শিত রক্তের লেভেল অনুযায়ী চিকিৎসক আপনার ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।