বর্ষায় টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ে
বর্ষায় টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ে

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের পার্থক্য জানেন তো?

বর্ষাকালে টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ায় অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে। এ কারণে বাড়ে টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের প্রকোপ। এ দুই ধরনের জ্বরই বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়, মারা যায়। টাইফয়েড সম্পর্কে সবার কমবেশি জানা থাকলেও প্যারাটাইফয়েড সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা সবার নেই। অনেকেই দুটি রোগকে একই মনে করেন। কিন্তু আসলেই কি তা-ই?
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড দুটি আলাদা রোগ হলেও লক্ষণে কিছু মিল আছে। টাইফয়েড যে ব্যাকটেরিয়া জীবাণু দিয়ে হয়, সেই একই গোত্রের অন্য জীবাণু দিয়ে হয় প্যারাটাইফয়েড। টাইফয়েডের জন্য দায়ী জীবাণু হলো সালমোনেলা টাইফি। আর প্যারাটাইফয়েডের জন্য দায়ী জীবাণু হলো সালমোনেলা প্যারাটাইফি এ, বি ও সি।

যেভাবে সংক্রমণ

দুটি রোগই দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং বন্যায় এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কম রান্না করা খাবার, কাঁচা ডিম, শাকসবজি বা দূষিত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যেও সালমোনেলা সংক্রমণের উৎস হতে পারে।
খাবার ও পানির মাধ্যমে জীবাণু প্রথমে অন্ত্রে পৌঁছে এবং অন্ত্র ভেদ করে বংশবৃদ্ধি করে। তারপর এটি যখন রক্তে পৌঁছায়, তখন দেখা যায় জ্বরসহ নানা রকম উপসর্গ।

টাইফয়েডের লক্ষণ কী

দুটি রোগের ক্ষেত্রেই সাধারণ লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, অরুচি, কাশি ইত্যাদি।
তবে টাইফয়েডের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে; ত্বকে ‘রোজ স্পট’ নামের ফুসকুড়ি, তীব্র জ্বর, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা (১০-১৪ দিন), মলত্যাগের সময় রক্তক্ষরণ ও মস্তিষ্কের প্রদাহ (বিরল)।
একইভাবে প্যারাটাইফয়েডেরও আলাদা কিছু লক্ষণ দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে কম তীব্র জ্বর, অপেক্ষাকৃত কম সময় ধরে অসুস্থতা (৭-১০ দিন)।
রক্ত পরীক্ষা: উভয় রোগের জন্যই রক্ত কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে করা হয়।
মল পরীক্ষা: টাইফয়েডের ক্ষেত্রে মল পরীক্ষায় জীবাণু পাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসা

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড দুটি রোগের চিকিৎসাতেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সাধারণত ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে আছে ফ্লুরোকুইনোলোনস (যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন), তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন (যেমন সেফট্রিয়াক্সোন), অ্যাজিথ্রোমাইসিন। চিকিৎসকেরা রোগীর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বাছাই করেন নির্দিষ্ট সালমোনেলা সেরোটাইপ এবং স্থানীয় অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসটেন্সের ওপর নির্ভর করে। সংক্রমণের তীব্রতা ও ক্লিনিক্যাল প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন স্থায়ী হয়। টাইফয়েডের চিকিৎসায় মাঝেমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স প্রয়োজন হতে পারে। আর প্যারাটাইফয়েডের চিকিৎসায় তুলনামূলকভাবে কম সময়ের অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সই যথেষ্ট। তবে মনে রাখবেন, অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ণ মেয়াদ ও সঠিক মাত্রায় খাওয়া জরুরি।
একই সঙ্গে এই সময়ে রোগীকে আরও কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হবে; পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর পরিমাণে তরল পান, জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ, জটিলতা হলে হাসপাতালে ভর্তি জরুরি।
স্বাস্থ্যকর খাবার ও বিশুদ্ধ পানি টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টয়লেট ব্যবহারের পর ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। খাবার পরিবেশনের আগে সাবান দিয়ে বাসনকোসন ধুয়ে নিতে হবে। টাইফয়েড প্রতিরোধে দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য টিকা কার্যকর।
রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা রোগ দুটি থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ