কদিন আগেই খবর বেরিয়েছে, ৮৩ বছর বয়সে চতুর্থ সন্তানের বাবা হয়েছেন হলিউড অভিনেতা আল পাচিনে। খবরটি দেখে অনেকের মনেই হয়তো কৌতূহল জাগতে পারে, কত বছর বয়স পর্যন্ত এক জন্য পুরুষ বাবা হতে পারেন?
৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়। ডিম্বাশয় নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন প্রজেস্টেরন উৎপাদনের ক্ষমতা হারায়। ফলে নারীরা হারান প্রজনন ক্ষমতা। পুরুষেরও কি তেমনটা হতে পারে? এমন কোনো নির্দিষ্ট বয়স বা সময় আছে কি, যখন পুরুষেরও প্রজনন ক্ষমতা বা যৌনজীবনের ইতি ঘটে?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরুষের ‘মেনোপজ’কে বলা হয় ‘অ্যান্ড্রোপজ’। মানে যখন পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে থাকে। নারীদের মেনোপজের সঙ্গে এর কিছু পার্থক্য আছে। যেমন নারীদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে বেশ দ্রুত, আকস্মিকভাবেই, সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে। এ সময় তাঁদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা ভীষণভাবে নিচে নেমে যায়, আর সমাপ্তি ঘটে প্রজনন জীবনের। বন্ধ হয়ে যায় রজঃস্রাব। কিন্তু পুরুষের বেলায় টেস্টোস্টেরনের নিম্নগামিতা ঘটে খুব ধীরে ধীরে। সবার একই বয়সে ঘটে, তা নয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, কারও কারও এই হরমোন কমে যাওয়া শুরু হতে পারে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সেই, বিশেষ করে যদি কারও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি সমস্যা থাকে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দেখা দেয় ৭০ বছরের পর। তবে এমনকি ৮০ বছর বয়সেও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা এমন থাকতে পারে যে সেই পুরুষ শুক্রাণু উৎপাদনে ও সন্তান জন্মদানে সক্ষম থাকতে পারেন। বিষয়টা নির্ভর করে ফিটনেসের ওপর।
কীভাবে বুঝবেন যে আপনার টেস্টোস্টেরন কমে যেতে শুরু করেছে। এর কতগুলো সাধারণ উপসর্গ আছে। যেমন সারাক্ষণ ক্লান্ত অবসন্ন লাগা, মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া বা দুর্বল মনে হওয়া। বিষণ্নতা, যৌনইচ্ছা কমে যাওয়া এবং যৌন অক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এমনকি নারীদের মতো মুড সুইং বা খিটখিটে মেজাজ দেখা দেওয়াও বিচিত্র নয়। এমন সব সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসক আপনার রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মাত্রা অস্বাভাবিক কম হলে কারণ নির্ণয় করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা করারও প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, শুধু বয়স বাড়া বা অ্যান্ড্রোপজ ছাড়াও টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রলেকটিন হরমোন বেড়ে যাওয়া, হাইপোগোনাডিজম ইত্যাদি।
মধ্যবয়সী বা বয়সী পুরুষদের অ্যান্ড্রোপজ হলে এবং তা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করলে নারীদের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে তারাও এইচআরটি বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দেওয়া হয় টেস্টোস্টেরন ইনজেকশন বা জেল। তবে নারীদের মতো পুরুষেরও এইচআরটি গ্রহণের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন যকৃতের এনজাইম বেড়ে যাওয়া, প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়া বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়া। তাই হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এটি নেওয়া উচিত নয়।
নারীদের মতো পুরুষের যৌন ও প্রজনন জীবন সমাপ্তির কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। কেউ কেউ সত্তরোর্ধ বয়সেও পূর্ণভাবে সক্ষম থাকতে পারেন। এটি নির্ভর করে অনেকটাই জীবনযাত্রার ধরনের ওপর। দীর্ঘদিন সক্ষম থাকতে এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ঠিক থাকতে আপনি কী করতে পারেন?
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ধূমপান বর্জন করুন।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং নানা ধরনের নেশাদ্রব্য দ্রুত অ্যান্ড্রোপজের দিকে ঠেলে দেয়। এসব এড়িয়ে চলুন।
বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, ইত্যাদি সমস্যা বাড়ায়।
স্থূলতা বা ওবেসিটি একটা বড় কারণ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। এটি ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কোনো অন্তর্নিহিত রোগ বা কোনো ওষুধ এর জন্য দায়ী কি না, দরকার হলে তা পরীক্ষা করুন।
মানসিক সমস্যা, যেমন বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব বা অতিরিক্ত উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকলে দরকার হলে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি, রিলাক্সেশন থেরাপি কখনো কখনো কাজে আসে।