আমাদের ধারণা, শিশুদের ডায়াবেটিস একটি বিরল রোগ। এটা তো বড়দের অসুখ। কিন্তু সময় পাল্টেছে, জীবনযাপনের পদ্ধতি বদলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস। এটা শুধু উন্নত বিশ্বে নয়, বাংলাদেশসহ সব দেশে শিশুদের এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে।
শিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের। প্রথমটির কারণ শরীরে ইনসুলিন তৈরি না হওয়া, যাকে বলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস। দ্বিতীয়টিতে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়, যার নাম টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দেয় তুলনামূলক কম বয়সে। আক্রান্ত শিশু দিন দিন শুকিয়ে যায়, ঘন ঘন প্রস্রাব করে আর দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে—এমনকি রক্তে শর্করা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় কিটোসিস হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস একটু বেশি বয়সের শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের দেখা যায়। যাদের ওজন বেশি, শরীরে অতিমাত্রায় মেদ, কায়িক পরিশ্রম করে না, তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে উভয় ক্ষেত্রেই কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য এ রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বা কিছু ওষুধের কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।
শিশু অতিমাত্রায় প্রস্রাব করে, নতুন করে বিছানায় প্রস্রাব করতে শুরু করে। পিপাসা ও ক্ষুধা বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত খাবার খেলেও ওজন বাড়ে না বা দ্রুত ওজন কমতে থাকে। শরীর দুর্বল লাগে, দৈনন্দিন কর্মে আগ্রহ কমে যায়, ঘন ঘন সংক্রমণের শিকার হতে পারে। জটিলতা সৃষ্টি হলে শ্বাসকষ্ট, বমি, পেটে ব্যথা, খিঁচুনি ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়—এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে, যাকে ‘ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস’ বলা হয়। দ্রুত চিকিৎসা না করালে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে এসব উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। মেদবহুল, স্থূল শিশু, ঘাড়ের ত্বকে কালো দাগ, কিশোরীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকতে পারে।
সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মূলত শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস ইনসুলিন ছাড়াও ১০ বছরের বেশি বয়স হলে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যতালিকা মেনে চলা ও বয়স অনুযায়ী কায়িক পরিশ্রম অপরিহার্য।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে আগে থেকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রম ও নিয়ন্ত্রিত জীবন চালনার অভ্যাস রপ্ত করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যদি শিশু স্থূল হয়, সঙ্গে পারিবারিক ইতিহাসসহ অন্যান্য ঝুঁকি থাকে, তবে উপসর্গ ছাড়াই শিশুর নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল