শিশুদের খিঁচুনি মা-বাবাদের কাছে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। খিঁচুনি সাধারণত মস্তিষ্কের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। খিঁচুনি কখনো সারা শরীরে হয়, আবার কখনো বিক্ষিপ্তভাবে শরীরের এখানে–ওখানে হয়। শিশুদের খিঁচুনির সঙ্গে কখনো জ্বর থাকতে পারে, আবার জ্বর ছাড়াও হয়ে থাকে।
যখন খিঁচুনির সঙ্গে জ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কিছুদিন পরপরই হয়, তখন একে সাধারণভাবে বলা হয় এপিলেপসি বা মৃগীরোগ। কিন্তু যখন আক্রান্ত শিশুর খিঁচুনির পাশাপাশি জ্বরও থাকে, তখন ধরে নিতে হবে মস্তিষ্কে বা মস্তিষ্কের আবরণীতে কোনো গুরুতর সংক্রমণ হয়েছে।
এ ছাড়া যাদের বয়স ৬ মাস থেকে ৬ বছরের মধ্যে, অনেক সময় তাদের যেকোনো জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে কোনো সংক্রমণ ছাড়াই। এ ধরনের খিঁচুনির আবার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন খিঁচুনি সমস্ত শরীরে হয়, স্বল্প সময় থাকে, খিঁচুনি শেষ হয়ে গেলে শিশুটি আবার দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
খিঁচুনি শুরু হলে দ্রুত শিশুকে একদিকে কাত করে, ঘাড়টা একটু সোজা করে ঘরের মেঝেতে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে শ্বাসনালিতে লালা, বমি বা অন্য কোনো কিছু না ঢুকে যায়।
চোখে চশমা থাকলে সরিয়ে রাখতে হবে, তা না হলে অনেক সময় ক্ষত হতে পারে। এ সময় মুখে কোনো ওষুধ, খাবার, পানি কিছুই দেওয়া যাবে না।
খিঁচতে থাকা হাত বা পা জোর করে হাত দিয়ে ধরে বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না। মুখ, নাক দ্রুত পরিষ্কার করে দিতে হবে যাতে মুখের ভেতর খাবার, লালা জমে শ্বাসে বাধা সৃষ্টি না করে।
খেয়াল করতে হবে শিশু শ্বাস নিচ্ছে কি না। যদি না নেয়, তাহলে মুখে মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
খিঁচুনি বন্ধ করার জন্য ডায়াজিপাম সাপোজিটরি বাড়িতে থাকলে এবং ব্যবহার পদ্ধতি জানা থাকলে, সেটি ব্যবহার করা যাবে।
শিশুকে দ্রুততার সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্বর খিঁচুনিতে আক্রান্ত শিশুর জ্বর কমিয়ে রাখতে পারলে খিঁচুনি অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাসায় প্যারাসিটামল সাপোজিটরি থাকলে তা মলদ্বারে দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে জ্বর কমে যাবে। পাশাপাশি সারা শরীর হালকা গরম পানিতে মুছে দিতে হবে।
খিঁচুনিতে আক্রান্ত শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে, অবশ্যই তাকে দ্রুত শিশুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশুবিশেষজ্ঞ