ওজন কমাতে কি শর্করা খাবার বাদ দেওয়া উচিত

ডায়েটের অর্থ কেবল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, এর অর্থ হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস। একজন মানুষ সারা জীবন কতটা সুস্থ থাকবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের ওপর। আমাদের অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশই খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।

বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন, ওজন কমাতে হলে ডায়েট করতে হবে। মোটেই তা নয়। সময়মতো পরিমিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই হচ্ছে ডায়েট। কেবল ওজন কমানো-বাড়ানো নয়, স্বাস্থ্যকর জীবনের অংশ হচ্ছে ডায়েট।

কোনো ব্যক্তির খাদ্যতালিকা তাঁর বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিঙ্গ, পেশা, রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল, কিডনির কার্যকারিতা, ফ্যাটসহ নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন ১৫ বছরের এক শিশু আর ৫০ বছর বয়সী একজনের ডায়েট চার্ট নিশ্চয় এক হবে না। আবার একজন সুস্থ মানুষ যে খাবার খাবেন, একজন কিডনি বা হার্টের রোগী সেগুলো খাবেন না।

শর্করা কি বাদ দেওয়া উচিত

শর্করাকে বলা হয় শক্তি সরবরাহকারী খাদ্য উপাদান। আর আমিষ হচ্ছে শরীর গঠনকারী খাদ্য উপাদান। আমাদের সারা দিনে প্রয়োজনীয় শক্তির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আসে শর্করা থেকে। ফ্যাট থেকেও শক্তি পাওয়া যায়, তবে সেটা বেশ জটিল প্রক্রিয়া।

ফলে শরীরের বিভিন্ন কোষীয় চক্রে শক্তির উৎস হিসেবে শর্করাই বেশি ব্যবহার করে শরীর। মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেও শর্করা ব্যবহৃত হয়। তাই খাবার থেকে শর্করা বাদ দেওয়া যাবে না। ওজন কমাতে চাইলে শর্করার পরিমাণ ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমানো যায়। সাধারণ শর্করার পরিবর্তে জটিল শর্করা খান। জটিল শর্করা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। লাল আটা, লাল চাল, ওটস, জবের চিড়া, শাক—এগুলো জটিল শর্করার ভালো উৎস। ওজন কমাতে হলে সাদা আটা, ময়দা, সাদা চাল, চিনি, কর্নফ্লেক্স, পাউরুটি, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার, অতিরিক্ত তেল বা তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। 

ডায়েটের নামে না খেয়ে থাকা যাবে না। চাহিদা অনুযায়ী খাবার না খেলে শরীর কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কম খাবার খেলে ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। তখন শক্তি উৎপাদনের জন্য কোষীয় চক্রগুলো ঠিকভাবে কাজ করবে না। এতে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

শর্করাহীন খাবার বা খাদ্য উপাদান বাদ দিলে যা হয়

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়া, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, চুল পড়া, চুল পেকে যাওয়া, চর্মরোগের আধিক্য, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, হাঁটু ও কোমরের হাড়ক্ষয়, রক্তে ও লিভারে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, হজমশক্তি কমে যাওয়া, গ্যাস্ট্রিকের কারণে আলসার ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

যেকোনো অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন কমালে সেটা স্থায়ী হবে না। আবার স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরলে ওজন আগের জায়গায় ফিরবে। ফলে ডায়েট করতে হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ব্যালান্স ডায়েট করুন।


মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল