ঋতু পরিবর্তন হলে আবহাওয়ার ধরন পাল্টায়, তার সঙ্গে হাজির হয় বিভিন্ন রোগ। এ রকম সময় বেড়ে যায় সর্দি, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা। শ্বাসকষ্ট হলে বেশিরভাগ মানুষ ধরে নেন যে হাঁপানি বা অ্যাজমার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে। তবে শ্বাসকষ্টের আসলে অনেক কারণ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, শ্বাসকষ্ট কেবল ফুসফুসজনিত সমস্যাতেই হয়। বিষয়টি সঠিক নয়। শরীরের অন্যান্য কিছু রোগেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
শ্বাসকষ্টের ফুসফুসজনিত কারণ
১. ফুসফুসের যেকোনো সমস্যায় মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অ্যালার্জিজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি শীতের শ্বাসকষ্টের একটা অন্যতম প্রধান কারণ। তবে ফুসফুসের আরও অনেক রোগ আছে, যার কারণেও হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
২. অ্যাজমার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগী বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। সঙ্গে কাশি, কফ ও শ্বাসযন্ত্র থেকে বাঁশির মতো আওয়াজ হওয়ার মতো সমস্যা থাকতে পারে। সেইসঙ্গে অ্যালার্জির ইতিহাসও থাকে।
৩. অনেকের সারা বছরই শ্বাসকষ্ট, কাশি ইত্যাদি থাকে। অ্যাজমার মতোই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা এমফাইসেমা রোগে অনেকে সারা বছর শ্বাসকষ্টে ভোগেন। তবে শীতে তা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এই রোগীরা সাধারণত ধূমপায়ী হন।
৪. ফুসফুসে যক্ষ্মা, ক্যানসার বা নিউমোনিয়া হলে কিংবা ফুসফুসে যেকোনো কারণে পানি, রক্ত বা বাতাস জমা হলে শ্বাসকষ্ট উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়। এসব সমস্যায় শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত আসা—এসব উপসর্গও থাকতে পারে।
শ্বাসকষ্টের অন্যান্য কারণ
১. হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যার উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। বিশেষ করে হার্ট ফেইলিউরে শ্বাসকষ্টের কারণে ধীরে ধীরে ব্যাহত হতে থাকে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
২. হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি, হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনে বাধা বা হৃৎপিণ্ডের চারপাশে পানি জমলেও মৃদু, মাঝারি বা তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এসব সমস্যাতেও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, পা ফোলা—এসব উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
৩. শরীরে রক্তস্বল্পতা হলে অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। অতি স্থূল মানুষের অল্প হাঁটাচলাতেই শ্বাসকষ্ট হয়। থাইরয়েড হরমোনের রোগ হাইপোথাইরয়েড বা হাইপারথাইরয়েড রোগের বিভিন্ন জটিলতায় শ্বাসকষ্টের অভিযোগ জানান অনেক রোগী।
৪. কখনো কখনো অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
যে জন্যই হোক না কেন, শ্বাসকষ্টের কারণ নির্ণয় করাটা খুব জরুরি। কারণ বের করে সঠিক চিকিৎসা না হলে শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। তা যেমন রোগীর অসহনীয় শারীরিক কষ্টের কারণ হয়, তেমনি আবার সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া না হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যায়।
রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা করে, সেই সঙ্গে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শ্বাসকষ্টের সঠিক কারণ নির্ণয় করে সময়োচিত চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি। এ কারণে শ্বাসকষ্ট উপসর্গ দেখা দিলে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে গ্রহণ করাটা জরুরি।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি