শিশুর গলায় ফলের বীজ আটকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে

একটু বড় হওয়ার পর শিশুরা সামনে যা পায়, তা–ই মুখে দিতে থাকে
ছবি: পেক্সেলস

একটু বড় হওয়ার পর শিশুরা সামনে যা পায়, তা–ই মুখে দিতে থাকে। অনেক সময় বাচ্চাদের এই অতি কৌতূহল হয়ে উঠতে পারে বড় বিপদের কারণ। মৌসুমি ফলের এ সময় শিশুকে ফল খেতে দেওয়ার সময়ও সাবধান থাকুন। শ্বাসনালিতে হঠাৎ ফলের বীজ বা কোনো বস্তু আটকে গিয়ে বড় দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
 
যেকোনো বয়সেই গলায় কিছু আটকে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার শঙ্কা বেশি। শিশুদের যেসব জিনিস গলায় বেশি আটকায় সেগুলোর মধ্যে আছে বাদাম, বিভিন্ন ফলের বীজ, শুকনা ফল, খাবার বা খেলনার ভাঙা অংশ, ছোট ব্যাটারি, বোতাম, গয়না, পুঁতি, পিন, কাগজের ক্লিপ, ট্যাপ, পেরেক, মার্বেল ইত্যাদি। এখন গ্রীষ্মকাল। বাজারে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের সমারোহ। একদিকে যেমন লোভনীয় রসালো ফল, তেমনি এসব অনেক ফলেই আছে ছোট বীজ। প্রতিবছরই দেখা যায়, এ সময় গলায় বীজ আটকে অনেক শিশু দুর্ঘটনায় পড়ে। অনেক বাবা–মা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাই কিছুটা সাবধান থাকলে এই দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

সাধারণত গলায় কিছু আটকে গেলে কফ রিফ্লেক্সের মাধ্যমে মানুষ সেটা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে এই রিফ্লেক্সগুলো পরিণত থাকে না। ফলে তারা গলায় আটকে থাকা ফলবীজ সহজে বের করে দিতে পারে না। শ্বাসনালির মুখে খাবার বা ফলবীজ আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ জন্য শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। কখনো কখনো সম্পূর্ণ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিলে শিশুর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

শিশুর গলায় কোনো ফলের বীজ আটকে গেলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে। ৭-১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে শিশুকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যেতে পারে। শ্বাসনালিতে কিছু আটকে গেলে শিশুর শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি বমি ভাব, কথা বলতে কষ্ট হওয়া, এমনকি শিশু নীল হয়ে যেতে পারে।

কী করবেন

শিশুর গলায় খাবার বা বীজ আটকালে তাৎক্ষণিকভাবে পেছন থেকে জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিন, এতে আটকে যাওয়া বস্তু বা খাবার দ্রুত বের হয়ে আসতে পারে।

খুব ছোট শিশু হলে তাকে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুড় করে পিঠে চাপড় দিতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলে ‘হেইমলিচ ম্যানোভার’। এতেও আটকে থাকা ফলের বীজ বের হয়ে যেতে পারে।

তবে কখনোই পানি বা গলায় হাত দিয়ে বীজ বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। বীজ বের না হওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না শুরু হওয়া পর্যন্ত ‘হেইমলিচ ম্যানোভার’ চালিয়ে যেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু অজ্ঞান বা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে কি না, হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে কি না।

এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সিপিআর শুরু করতে পারলে শিশুর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

স্কুল, কলেজ, রেস্তোরাঁ, পাড়ার ক্লাব মেম্বার আর অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীদের সিপিআর প্রশিক্ষণ থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেটা জীবন বাঁচাতে পারে।

শিশুর গলায় যাতে ফলের বীজ আটকে না যায়, তাই বীজ বাদ দিয়ে ফল খেতে দেওয়া যেতে পারে। বড়দের তত্ত্বাবধানে খেতে দেওয়াই ভালো। বড়রা ফল খেয়ে যেখানে–

সেখানে বীজ ফেলবেন না। কোনো বোতলের মুখ অথবা খেলনার টুকরা শিশুর হাতের নাগালে রাখবেন না। দুর্ঘটনা ঘটলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 
লেখক: ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর