খিঁচুনি বা মৃগীরোগ কেন হয়, চিকিৎসা কী

হঠাৎ অস্বাভাবিক কাঁপুনি বা খিঁচুনি হওয়া, চোখ-মুখ উল্টে হাত-পা ছোঁড়া, অচেতন হওয়া, মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা বের হওয়া কিংবা শিশুদের ক্ষেত্রে চোখের পাতা স্থির হয়ে যাওয়া, একদৃষ্টিতে একদিকে চেয়ে থাকা অথবা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে তাকে মৃগীরোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

গ্রামাঞ্চলে মৃগী হলে অনেক সময় একে জিনে ধরা, ভূতের আসর হিসেবে ধারণা করা হয়, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ–কবজ করা হয়। এটি ঠিক নয়। মৃগী আসলে স্নায়ুতন্ত্রের একটি জটিলতা।

কারণ

  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মৃগীরোগের পেছনে তেমন কারণ পাওয়া যায় না। এ ধরনের খিঁচুনিকে প্রাইমারি এপিলেপসি বলা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে বা জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেলে, অক্সিজেন পেতে দেরি হলে অথবা ওজন কম হলে বা সময়ের আগে জন্ম নিলে, তাদের পরে মৃগীরোগ হতে দেখা যায়।

  • বড়দের রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে, শর্করা কমে গেলে, মাথায় আঘাত পেলে বা টিউমার হলে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা রক্তক্ষরণ হলে খিঁচুনি হতে পারে।

  • মৃগীরোগীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ওষুধ সেবনেও খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না।

করণীয়

  • খিঁচুনিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে।

  • পরিধানের কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে।

  • কাছাকাছি আগুন, গরম পানি, ধারালো কিছু থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

  • আরামদায়ক অবস্থায় কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখের লালা বাইরে পড়ে যায়।

  • অনেক সময় রোগীকে চেপে ধরা হয় যেন খিঁচুনি না হয়, নাকে জুতা ধরা হয়—এগুলো করা যাবে না; যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

রোগনির্ণয়

  • রোগীর পূর্ণ ইতিহাস ও সম্ভব হলে খিঁচুনির ভিডিও রোগনির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • মস্তিষ্কের ইমেজিং-সিটি স্ক্যান বা এমআরআই ও বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে। যেমন রক্তের ইলেকট্রোলাইট, শর্করা, মেরুদণ্ডের রস ইত্যাদি।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনির কারণ নির্মূল হলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, এমনকি সারা জীবনও প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মৃগীরোগের চিকিৎসা করানো উচিত।

  • ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, আগারগাঁও, ঢাকা