ভালো থাকুন

ঘাড়ের মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঘাড়ের হার্নিয়েটেড বা ডিজেনারেটিভ ডিস্ক অপসারণ করা হয়। ঘাড়ব্যথার জন্য যখন ফিজিওথেরাপি বা ওষুধে কাজ না হয়, তখন এই সার্জারি করা হয়।

কেন করবেন

কশেরুকার ওপরে ডিজেনারেশন বা ক্ষয় হলে ডিস্ক পাতলা হয় ও শুকিয়ে যায়। এর ফলে মেরুদণ্ড সংকুচিত, অসাড় ও দুর্বল হয়ে যায়। মেরুদণ্ডের স্নায়ু ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। সুস্থ ডিস্ক হাড়ের মধ্যে একটি নমনীয় কুশন হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের ঘাড়কে বাঁকাতে ও ঘোরাতে সাহায্য করে।

ডিসসেক্টমির আক্ষরিক অর্থ ‘ডিস্ক কাটা’। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ডিস্কের ধরনের ওপর নির্ভর করে একটি ডিস্ক (একক স্তর) বা তার বেশি (মাল্টিলেভেল) সরানো হয়।

ডিস্ক অপসারণের পর হাড়ের কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থান খালি থাকে। কশেরুকাগুলোকে ভেঙে পড়া ও একসঙ্গে যাতে ঘষা না লাগে, সে জন্য ডিস্কের স্থান পূরণ করতে একটি স্পেসার হাড়ের গ্রাফট ঢোকানো হয়। হাড়ের কলম ও কশেরুকা ধাতব প্লেট ও স্ক্রু দিয়ে জায়গায় স্থির করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর গ্রাফটের চারপাশে নতুন হাড়ের কোষ বৃদ্ধি পায়। তিন থেকে ছয় মাস পর হাড়ের কলম দুটি কশেরুকার সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি শক্ত হাড় তৈরি করে।

অস্ত্রোপচারের আগে

অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসা ইতিহাস, অ্যালার্জি, ওষুধ/ভিটামিন, রক্তপাতের ইতিহাস, অ্যানেসথেসিয়ার প্রতিক্রিয়া ও আগের অস্ত্রোপচার সম্পর্কে জানাতে হবে। প্রিসার্জিক্যাল পরীক্ষা, যেমন রক্ত পরীক্ষা, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম, বুকের এক্স-রে করতে হবে। অস্ত্রোপচারের সাত দিন আগে সব নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (আইবুপ্রোফেন, অ্যাডভিল ইত্যাদি) এবং রক্ত পাতলাকারী ওষুধ নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। রক্তপাত এবং নিরাময় সমস্যা এড়াতে অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ আগে এবং দুই সপ্তাহ পরে নিকোটিন ব্যবহার ও অ্যালকোহল পান বন্ধ রাখতে হবে। অস্ত্রোপচারের আগে মধ্যরাতের পর খাওয়া যাবে না।

অস্ত্রোপচারের পরে

ঘাড় বাঁকানো বা মোচড়ানো এড়িয়ে চলুন। পাঁচ পাউন্ডের বেশি ভারী কিছু তুলবেন না। ঝুঁকে কোনো কাজ করবেন না। ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ রাখুন। ফলোআপ ভিজিট না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যথার ওষুধ খান। যদি বন্ধনী দেওয়া হয়, তবে এটি ঘুমানোর সময়, গোসল করা বা আইসিং করার সময় ছাড়া সব সময়ই পরুন। ব্যথা ও ফোলা কমাতে প্রতিদিন তিন-চারবার বরফের সেঁকা দিন। তিন-চার ঘণ্টা পরপর ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটুন। ধীরে ধীরে হাঁটা বাড়ান, যতটা সম্ভব। অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ চিকিৎসকের সঙ্গে ফলোআপ দেখা করুন।

  • ডা. হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা