জীবনে যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর মধ্যে একেবারে প্রথম দিকেই থাকবে ঘুম। সহজ কথায়, মুঠোফোনে যেমন চার্জ দেওয়া দরকার, শরীরও ঘুমের মাধ্যমে চার্জ নেয়। নিজের শারীরিক, মানসিক সুস্থতার জন্য ও অনুভূতিগত ভারসাম্যের জন্য ঘুম জরুরি। যেকোনো শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক আঘাত বা অনুভূতিগত বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘুম তুলনাহীন। বেঁচে থাকার জন্য ঘুম আবশ্যক। না ঘুমিয়ে আপনি এক সপ্তাহও টিকতে পারবেন না। তাই দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুমকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
স্লিপ ইনারশিয়া বলে একটা ব্যাপার আছে। হয়তো আপনি মানসিকভাবে অস্থিরতা বা কোনো দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। সেই দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা আপনার সচেতন মন থেকে অবচেতন মনে ঢুকে পড়ে। তখন আপনি গভীর নিদ্রায় ডুব দিতে পারেন না। ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন। আবার ঘুমাতে ঘুমাতে মাঝখান থেকে হয়তো পেরিয়ে যায় দুই ঘণ্টা।
‘স্লিপ হাইজিন’ ঠিক নেই। মানে, একেক দিন একেক সময় ঘুমাতে যাচ্ছেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ‘স্ক্রিন টাইম’ ‘স্ক্রলিং’ চলছে।
জীবনযাত্রা ও ডায়েট ঠিক নেই। হয়তো দিনে ঘুমাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন খাচ্ছেন।
প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান। একই সময় উঠুন। এই অভ্যাস করুন।
ঘর অন্ধকার আর শীতল রাখুন। আলো বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘুমের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। আরামদায়ক পোশাক পরুন।
রাতের খাবার হালকা রাখুন। খুব ভারী, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত রেডমিট পারতপক্ষে কখনোই খাওয়া উচিত নয়। যদি খেতেই হয়, সামান্য খান। দিনে খাবেন, রাতের আগেই যেন হজম হয়ে যায়।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দুই গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। দীর্ঘ সময় পর শরীর পানি পেয়ে তার কার্যক্রম ভালোভাবে শুরু করতে পারবে। তাতে দিনেই যদি পানির চাহিদা পূরণ করেন, তাহলে দিনের শেষ ভাগে পানি খাওয়ার চাহিদা কম থাকবে। রাতে ঘুম ভেঙে বাথরুম ‘ভ্রমণে’ যেতে হবে কম!
রাতে ঘুমানোর সময় হাতের কাছে এক গ্লাস পানি রাখুন। তৃষ্ণায় ঘুম ভাঙলে গ্লাসে চুমুক দিন।
এই অভ্যাস আপনার হজমে সহায়তা করবে। শরীর থেকে যথাসময়ে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেবে। আপনার রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাও ভালো থাকবে। আর ঘুমের জন্যও সহায়ক।
সব সময় পাকস্থলীর তিন ভাগের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করবেন। আরেক ভাগ খালি রাখবেন। পেট ভরে খাওয়া কোনো কাজের কথা নয়!
আপনার খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার, ক্যাফেইন কমান। এগুলো নার্ভকে সজাগ রাখে। ফলে আপনাকে ঘুমাতে দেয় না।
রাতে হালকা খাবার খান। ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ডিনার সারুন।
শারীরিক পরিশ্রম
আপনার জীবনযাত্রায় হাঁটাচলা, ব্যায়াম খুবই জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট (পাঁচ হাজার কদম, প্রায় চার কিলোমিটার) জোরে হাঁটুন। সাইকেল চালাতে পারলে আরও ভালো। আর সবচেয়ে ভালো সাঁতার কাটা। সাঁতারে শরীরের সব অঙ্গ উপকৃত হয়।
প্লাংকস করুন। দুই হাত আর পায়ের পাতার ওপর ভর করে পুশআপের ভঙ্গিতে দুই মিনিট করে কয়েকবার থাকুন। সম্ভব হলে অন্তত ১০০ বার পুশআপ করুন।
সপ্তাহে তিন দিন কার্ডিও করুন।
‘ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট’ শিখুন। উত্তেজনা পরিহার করুন। নিজেকে শান্ত রাখুন।
ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে থেকে মুঠোফোন, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন। বিছানায় ‘স্ক্রিনটাইম’ নয়।
জার্নাল লিখতে পারেন। আগামীকালের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিখতে পারেন। সারা দিনের একটি উল্লেখযোগ্য কথা, ঘটনা বা অনুপ্রেরণা জাগানোর মতো কিছু লিখে রাখতে পারেন। যেটা দিয়ে আপনি দিনটাকে মনে রাখতে চান। চাইলে হালকা মিউজিক ছেড়ে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে স্নান সেরে আরামদায়ক পোশাকে বিছানায় যেতে পারেন।