ডেঙ্গুর ধরন পাল্টেছে। এখন তিন দিনের মাথায় এমনকি জ্বরের দু-এক দিনেই কারও কারও গুরুতর অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জ্বর হওয়ার দুই দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। রক্তের সিবিসি ও ডেঙ্গু এনএস-ওয়ান অ্যান্টিজেন এ সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু এনএস-ওয়ান অ্যান্টিজেন সাধারণত এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পজিটিভ হয়। জ্বর সাত দিন পার হলে রক্তে ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হয়। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে রক্ত পরীক্ষায় এনএস-ওয়ান অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি—কোনোটাই পজিটিভ না–ও হতে পারে। এ সময় ডেঙ্গুর ‘উইন্ডো পিরিয়ড’।
উইন্ডো পিরিয়ড ও ডেঙ্গু থেকে সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা পর্যন্ত রক্তের সিবিসিতে হেমাটোক্রিটের মাত্রা ও প্লাটিলেটের পরিমাণ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় বেশি তথ্য দেয়। জ্বরের প্রথম দু-এক দিনে হেমাটোক্রিটের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। পরবর্তী সময় এই মাত্রা আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়লে তা মাঝারি ডেঙ্গু আর ২০ শতাংশ বাড়লে তা মারাত্মক ডেঙ্গুর পর্যায়ে পড়বে।
হেমাটোক্রিট বৃদ্ধির অর্থ রোগীর রক্তনালি থেকে রক্তরস বেরিয়ে যাচ্ছে এবং রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা দ্রুত ঘটতে থাকলে রোগীর রক্তচাপ কমে শক সিনড্রোম হতে পারে। তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় রোগীকে শিরার মাধ্যমে পর্যাপ্ত স্যালাইন দিতে হয়।
তীব্র পেটের ব্যথা। দিনে তিনবারের বেশি বমি। দিনে তিনবারের বেশি ডায়রিয়া।
শরীরের কোথাও পানি জমার চিহ্ন, বিশেষ করে পেট ও পায়ের গোড়ালির ওপরের দিকে।
দাঁতের মাড়ি, ঠোঁট বা জিহ্বায় রক্তক্ষরণের চিহ্ন।
অতিরিক্ত ক্লান্তি অথবা অস্থিরতা।
রক্তের হেমাটোক্রিটের মাত্রা বৃদ্ধি অথবা প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া।
মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে পারলে, পর্যাপ্ত প্রস্রাব হলে ও শরীর থেকে রক্তক্ষরণ না হলে।
নাড়ির গতি ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে। কোনো শ্বাসকষ্ট না হলে। পেটে ব্যথা না থাকলে
শরীরে লালচে দানা না থাকলে। পেটে বা পায়ে পানি জমার চিহ্ন না থাকলে।
মানসিকভাবে স্বাভাবিক থাকলে। হেমাটোক্রিটের মাত্রা না বাড়লে।
রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক হতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, কিডনির অসুখ, লিভারের অসুখ, ক্যানসার বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ আছে, তাঁদের ডেঙ্গু জ্বরের দু-এক দিনের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। গর্ভবতী মায়ের ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা