সাল ২০১৬। কিউবার রাজধানী হাভানায় কর্মরত কয়েকজন মার্কিন কূটনৈতিক হঠাৎই অভূতপূর্ব এক রোগে আক্রান্ত হন। একেকজনের শুরুর উপসর্গ একেক রকম। কেউ হয়তো হঠাৎই তীক্ষ্ণ একটা শব্দ শুনতে পান। কেউ কেউ অনুভব করেন তীব্র একটা চাপ কিংবা কম্পন। কারও মনে হতে থাকে, ঘরটা দুলছে। এরপর শুরু হয় মাথাব্যথা আর বমিভাব। মাথাও ঘুরাতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি কাজকর্মে ঠিকঠাক মনঃসংযোগ করতে পারছিলেন না। ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা গিয়েছিল। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং দৈহিক ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকের উপসর্গই দীর্ঘদিন রয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে অবসর নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
দিব্যি সুস্থ মধ্যবয়সী এই মানুষগুলোর হঠাৎ এমন উপসর্গ দেখা দেওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? স্নায়ুতন্ত্রের কোনো রোগ? তাও আবার এত মানুষের একই সময়ে? নাকি তীব্র কাজের চাপে সৃষ্ট কোনো মানসিক রোগ? নাকি বিকিরণের (রেডিয়েশন) কারণে এমনটা ঘটেছে? সন্দেহপ্রবণ হয়ে কেউ কেউ এমনটাও ভেবেছিলেন—যে শব্দ বা কম্পন অনুভব করার পর উপসর্গগুলো দেখা গেল, সেটাই কি প্রতিপক্ষের নিক্ষেপ করা বিশেষ কোনো অস্ত্র? দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, এমন কোনো অস্ত্র? প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপর পক্ষ তো কত কিছুই করে!
এই নিয়ে শুরু হলো গবেষণা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের গঠনগত এবং কার্যকারিতার মধ্যে তুলনামূলক চিত্রটা যা দাঁড়াল, তাতে খানিকটা পরিবর্তন ধরা পড়ল। হতে পারে এই পরিবর্তনের কারণে কোনো ভাইরাস; বিকিরণকেও রাখতে হয় সম্ভাব্য কারণের তালিকায়। কেই–বা নিশ্চয়তা দিতে পারে, এটি সত্যিই কোনো অস্ত্রের কারণে হয়নি?
আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম যে শব্দটা শুনেছিলেন, তা ছিল কিউবার এক জাতের ঝিঁঝিপোকার শব্দ। তবে মজার ব্যাপার হলো, একই ধরনের উপসর্গ ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় কর্মরত মার্কিন কূটনৈতিকদের মধ্যেও দেখা গিয়েছে। কাজ কিংবা পড়ালেখার সূত্রে পরিবার থেকে বহু দূরে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। মানসিক কারণটাকেও তাই একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
শুরুটা হাভানায় হয়েছিল। রোগটির নাম তাই হাভানা সিনড্রোম। এরপর পৃথিবীর যে প্রান্তেই দেখা মিলেছে এ ধরনের উপসর্গ, সেই একই রোগ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে এখনো অমীমাংসিত এক রহস্য হয়েই রয়ে গেছে হাভানা সিনড্রোম, যার পেছনের সত্যিকার কারণ আজও অজানা।