ভালো থাকুন

বুকে ব্যথা হওয়া মানেই হৃদ্‌রোগ নয়

বুকে ব্যথা হলে প্রথমেই মনে হয় এই বুঝি হৃদ্‌রোগ হয়ে গেল। এ ভয় যে সম্পূর্ণ অমূলক, তা নয়। তবে হৃদ্‌রোগ ছাড়াও বুকে ব্যথা হতে পারে। যেকোনো বয়সের মানুষের যেকোনো সময় এ ব্যথা হতে পারে।

দেখা গেছে, হৃদ্‌রোগের কারণে বুকে ব্যথা নিয়ে যত রোগী চিকিৎসকের কাছে যান, তার চেয়ে চার গুণ বেশি যান হৃদ্‌রোগবহির্ভূত ব্যথা নিয়ে। তাই হৃদ্‌রোগ নিশ্চিতভাবে পাওয়া না গেলে ব্যথার অন্য কারণগুলোর অনুসন্ধান জরুরি।

বুকে যে ব্যথা হচ্ছে, তা হৃৎপিণ্ডের রোগ, না হৃদ্‌রোগবহির্ভূত, তা রোগীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

হৃদ্‌রোগ ছাড়াও অন্য যেসব কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে—

  • বুকের মাংসপেশির বা পাঁজরের হাড়ের কোনো সমস্যা, বুকে আঘাত পাওয়া, কোনো ওষুধ সেবনের জন্য, এমনকি ফুসফুসের সমস্যার জন্য বুকে ব্যথা হতে পারে।

  • খাদ্যনালির নানা সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে। আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার জন্য অ্যাসিড থাকে, কখনো কখনো এই অ্যাসিড খাদ্যনালিতে চলে আসে। ফলে বুক বা গলা জ্বালা করতে পারে। বুকের হাড়ের নিচে এ ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

  • বুক জ্বালা থেকে যে ধরনের ব্যথা হয়, তা সাধারণত খাওয়ার পর হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা বেশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে।

  • ভয় বা আতঙ্ক থেকেও অনেকের বুক ব্যথা করতে পারে। তখন ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে।

  • কখনো কখনো খাদ্য গিলতে অসুবিধা হয় এবং একই সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। খাদ্য গেলার পর খাদ্যনালির মাংসপেশি খাদ্যকে নিচের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালি এই সমন্বয় হারিয়ে ফেলে। আর এর ফলে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। নাইট্রোগ্লিসারিন–জাতীয় ওষুধ মুখে দিলে এ ধরনের ব্যথা ভালো হয়ে যায়। আবার হৃদ্‌রোগসংক্রান্ত ব্যথা কমাতেও একই ওষুধ ব্যবহার করা হয় বলে কখনো কখনো ভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

মনে রাখবেন

  • হৃদ্‌রোগজনিত বুকে ব্যথায় বুকে চাপ চাপ ব্যথা হয়, ব্যথা বুকের মাঝখান থেকে ক্রমান্বয়ে পুরো বুক, ঘাড়, চোয়াল ও হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম, অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

  • বুকে ব্যথা হলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিতে হবে এবং ইসিজি ও ট্রপোনিন আই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে হার্ট অ্যাটাক হয়নি।

  • এরপর অন্য কারণ থাকলে সেটি বের করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ