গর্ভাবস্থায় কোন ভিটামিন খাওয়া দরকার, কোনটা নয়

যখন প্রতিদিনের খাবার থেকে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয় না, তখন দরকার হয় পরিপূরক
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

মানুষের দৈহিক গঠন ও কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বয়সে ও বিভিন্ন সময়ে এসব ভিটামিনের চাহিদার তারতম্য ঘটে। যখন প্রতিদিনের খাবার থেকে তা পূরণ হয় না, তখন দরকার হয় পরিপূরক। যেমন গর্ভাবস্থায় দেহে বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা বেড়ে যায়। আবার কিছু ভিটামিন আছে, যা এ সময়ে সেবন করলে মা এবং গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং এসব সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি—

যেসব ভিটামিন সেবন করা যাবে

ফলিক অ্যাসিড: ডিএনএ উৎপাদন, রক্ত তৈরি, ভ্রূণের বৃদ্ধি, ভ্রূণের স্নায়ু ত্রুটি ও জন্ম ত্রুটি প্রতিহত করতে ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা অসীম। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থার ১ মাস আগে থেকে গর্ভাবস্থার ন্যূনতম ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করতে হবে।

ক্যালসিয়াম: নবজাতকের হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই এ সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় দিনে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। যেহেতু নবজাতকের হাড়ের গঠন ১২ সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়, তাই ক্যালসিয়াম ১২ সপ্তাহ পর থেকে সেবন করতে হবে।

আয়রন: গর্ভাবস্থায় দৈনিক ১৭ মিলিগ্রাম আয়রন দরকার। এটি রক্তকণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। এর অভাবে শিশু ও মা দুজনের রক্তস্বল্পতা হতে পারে। এ ছাড়া এর অভাবে অপরিণত শিশু জন্মদান, মায়ের মানসিক অবসন্নতা ও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আয়রনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, যার থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। তাই এটি ১২ সপ্তাহ পর থেকে সেবন করতে হবে।

আয়োডিন: গর্ভাবস্থায় আর একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আয়োডিন। এর অভাবে গর্ভপাত, মৃত নবজাতক প্রসব, বাচ্চার খর্বাকৃতি গঠন এবং নবজাতকের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য এই অবস্থায় প্রতি দিন ১৫০ মিলিগ্রাম আয়োডিন খেতে হবে।

ভিটামিন-ডি: গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি-র প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নবজাতকের হাড়, দাঁতসহ সুস্থ চামড়া ও চোখের জন্য এটি দরকার।

ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৬৫০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দরকার। এর অভাবে অপরিণত ও কম ওজনসমৃদ্ধ শিশু জন্ম নিতে পারে।

জিংক: গর্ভাবস্থায় জিংক অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান। এ সময় দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম জিংক খেতে হবে। এটি অপরিণত ও কম ওজনের শিশু জন্মদান প্রতিরোধ করে।

ভিটামিন সি: গর্ভাবস্থায় আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন সি। এটি আয়রন হজমে সহায়তা করে। দৈনিক ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।

যেসব ভিটামিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে

ভিটামিন এ: ভিটামিন এর পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে শিশু জন্মত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। মায়ের লিভার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও নবজাতকের দৃষ্টিশক্তি ও রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন এ দরকার, কিন্তু সন্তান ও মায়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় যতটুকু ভিটামিন এ দরকার, আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার থেকেই এর চাহিদা পূরণ হয়।

ভিটামিন ই: ভিটামিন ই খাওয়ার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। যার ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

সেবনের সময়কাল

গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহ বমি বমি ভাব থাকে, সে জন্য কিছু বাদে বেশির ভাগ ভিটামিন ১২ সপ্তাহের পর থেকে সেবন করতে হয়।

কেন প্রতিদিনের খাবারে গর্ভাবস্থায় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয় না?

  • গর্ভাবস্থায় ভিটামিনের চাহিদা বেশি থাকে।

  • খাবারে অরুচি।

  • তীব্র বমি ভাব।

  • বাজারের খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা মা ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর।

  • গর্ভাবস্থায় সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। তাই ভিটামিনসহ যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে সাবধানতার সঙ্গে সেবন করতে হবে।