বিশ্বে ৮৫ কোটির বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল হওয়া। সে ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এর চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। তাই প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মারা যান। সচেতনতা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কিডনি বিকলের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ইত্যাদি। কিডনি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবেও অনেক ক্ষেত্রে কিডনি নষ্ট হয়। যেমন নিজে নিজে ব্যথার ওষুধ সেবন, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, বাচ্চাদের গলাব্যথা-খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় অবহেলা, জন্মগত কিডনির সমস্যার দিকে মা-বাবা সচেতন না থাকা। এ ছাড়া মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, প্রস্রাব প্রবাহে বাধা, বয়সজনিত রোগও কয়েকটি কারণ।
নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা গেলে কিডনি বিকল আটকে দেওয়া যায়। কিডনির ক্ষমতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিনষ্ট হওয়ার আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই যাঁদের ঝুঁকি আছে, তাঁরা নিয়মিত রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করবেন।
সুস্থ জীবনধারার চর্চা ও নিয়মিত কিডনি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুস্থ জীবনধারার প্রধান সোপানগুলো হলো নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম, পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ।
● দাতাসংকট নিরসনে দেশে অঙ্গ সংযোজন আইনে দাতার পরিধি বাড়ানো।
● জেলা-উপজেলায় ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু।
উন্নত দেশগুলোয় ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে হয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আমাদের দেশেও ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালু করা দরকার।
ডা. এম এ সামাদ, অধ্যাপক, কিডনি রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল