সূর্যের আলো আমাদের দেয় মহামূল্যবান ভিটামিন ডি
সূর্যের আলো আমাদের দেয় মহামূল্যবান ভিটামিন ডি

কীভাবে রোদ থেকে সর্বোচ্চ ভিটামিন ডি পাবেন

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা দিতে, পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডির আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ভিটামিন ডি শরীরের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। খাদ্যনালি থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করে রক্তে নিয়ে গিয়ে হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা দিতে, পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডির আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ভিটামিন ডির অভাবে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, শিশুদের রিকেটস অর্থাৎ পা ধনুকের মতো বাঁকা হয় ও বড়দের অস্টিওম্যালাশিয়া অর্থাৎ হাড়ের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কমে গিয়ে হাড় দুর্বল হয়, হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থাও হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন ডির অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, যেমন হাড় ও মাংসপেশিতে ব্যথা, ব্যাক পেইন বা কোমরব্যথা ও হাঁটুর ব্যথা হয়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ক্লান্তি, অবসাদ ও বিষণ্নতা পেয়ে বসে। এ ছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, গর্ভধারণে জটিলতা, ত্বকের অসুখ, কাটা বা ক্ষতস্থান শুকাতে দেরি হওয়া ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন ডির ঘাটতি পোষাবেন যেভাবে

ঘরের ভেতরে বেশি সময় কাটানো, রোদে কম যাওয়া ও ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া—এসবই ভিটামিন ডি ঘাটতির প্রধান কারণ। সূর্যের আলো অর্থাৎ রোদ ভিটামিন ডির অন্যতম প্রধান উৎস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি (ইউভি বি) থেকে শরীরের ত্বক ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, গরু বা খাশির কলিজা, দুধ, দই, মাখন, বাদাম, কমলা ইত্যাদি খাবার থেকেও ভিটামিন ডি কিছু মাত্রায় পাওয়া যায়।

কারও রক্ত পরীক্ষায় প্রতি মিলিলিটার রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা ২০ ন্যানোগ্রামের কম পাওয়া গেলে শরীরে ভিটামিন ডির অভাব আছে বলে ধরা হয়। এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভিটামিন ডি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে।

রোদ পোহানোর সময় যা মনে রাখবেন

আজকাল অনেকেই ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য রোদ পোহাতে চান। কিন্তু জেনে নিতে হবে, কীভাবে রোদ পোহালে আপনি এর সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারেন। রোদ পোহানোর ব্যাপারে সহজ করে ‘১০-১৫’ নিয়ম মনে রাখা যেতে পারে। সকাল ১০টা থেকে ১৫টা (অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা) পর্যন্ত সময়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় ধরে মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন (অর্থাৎ এক দিন বা দুই দিন পরপর) রোদ লাগালে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারে। রোদে বেশি পরিমাণ ত্বক উন্মুক্ত রাখলে শরীরে বেশি ভিটামিন ডি তৈরি হবে। মুখমণ্ডল, হাত, বাহু ও হাঁটুর নিচের অংশ খোলা রেখে রোদ পোহালেই শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি করে নিতে পারবে।

তবে গায়ের রং যাঁদের কিছুটা চাপা, তাঁদেরকে রোদ থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পেতে হলে ফরসা মানুষদের চেয়ে একটু বেশি সময় রোদ পোহাতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, বাড়িঘরের বা গাড়ির কাচের জানালা ও কাপড়ের ভেতর দিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি প্রবেশ করতে পারে না। মেঘলা দিনের রোদেও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি কম থাকে।

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ্: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।