বর্তমানে যকৃত বা লিভারের সবচেয়ে পরিচিত রোগের নাম ফ্যাটি লিভার। যার আরেক নাম নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। পৃথিবীর এক–তৃতীয়াংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা সাধারণত পুরষদের বেশি দেখা যায়। যকৃতের ৫ শতাংশের বেশী কোষে চর্বি জমা হলে তাকে বলে ফ্যাটি লিভার। চর্বির আধিক্য লিভারের কোষগুলোকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে দেয়। একপর্যায়ে কোষগুলো ফেটে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। তখন লিভার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কীভাবে বুঝব লিভার ফ্যাটি?
সাধারণত ফ্যাটি লিভারে সরাসরি কোন উপসর্গ দেখা যায় না। ফ্যাটি লিভারজনিত জটিলতা লিভার সিরোসিস। এতে আক্রান্ত হলে জন্ডিস, পেট ফোলা, পা ফোলা, রক্তবমি, ঘন কালো পায়খানা, চুলকানি, অতিরিক্ত তন্দ্রাচ্ছন্নতা, অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিতে পারে।
সাধারণত পেটের আলট্রাসাউন্ড অথবা কিছু নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা করলে ফ্যাটি লিভার শনাক্ত করা সম্ভব। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিভার তথা যকৃতের টিস্যু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছেন কারা
১. ডায়াবেটিস
২. উচ্চ রক্তচাপ
৩. রক্তে কোলস্টেরল বা চর্বির আধিক্য
৪. অতিরিক্ত ওজন
৫. থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা
৬. নিদ্রাজনিত সমস্যা বা স্লিপ এপনিয়া
৭. পরিবারের অন্য কারও ফ্যাটি লিভার বা অতিরিক্ত ওজন থাকলে
৮. ধূমপায়ী
৯. বয়স ৫০–এর বেশি হলে
ওপরের যেকোনো একটি ঝুকি যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি।
ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচার উপায়
১. সুষম খাদ্যতালিকা মেনে চলা ও সে অনুযায়ী খাবার খাওয়া।
২. খাবারে তালিকায় প্রতিদিন ফলমূল, শাকসবজি রাখা।
৩. অতিরিক্ত চর্বি, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড পরিহার করা।
৪. কোমল পানীয়, চিনিযুক্ত শরবত, জুস, চা পরিহার করা।
৫. অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা।
৬. ধূমপান একদম নিষেধ।
৭. সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করা।
৮. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকলে কমপক্ষে ১০ শতাংশ ওজন কমানো।
৯. আদর্শ ওজন ও উচ্চতার অনুপাত তথা বিএমআই (১৮.৫ -২৪.৯) অনুসরণ করা।
১০. মিষ্টিজাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা।
ডা. মুসআব খলিল, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
Photo by Artem Podrez from pexels.