শিশুরা অসুস্থ হলে সহজে ওষুধ খেতে চায় না। আবার ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ফেলে দেওয়া বাচ্চাদের জন্য খুব সাধারণ একটি ঘটনা। ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ফেলে দেওয়ার ঘটনা শুধু যে পাকস্থলী ও রক্তে ওষুধ প্রবেশের মাত্রা কমিয়ে দেয়, তা–ই নয়; যথাযথ মাত্রায় ওষুধ শরীরে প্রবেশ না করলে চিকিৎসা করাও হয়ে ওঠে কষ্টসাধ্য। পরবর্তী সময়ে শিশুদের ওষুধ খাওয়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে, ওষুধ দেখলেই বমির ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে তারা।
ওষুধ খাওয়ার পরপরই বমি করা যে শুধু শিশুদের ক্ষেত্রেই হয়, তা নয়। বড়দেরও এ সমস্যা থাকতে পারে। তবে শিশুদের ভেতর এই প্রবণতা বেশি। এ জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। সেগুলো হলো—
• তেতো ওষুধ শিশুরা খেতে চায় না। অভিভাবক জোর করে শিশুকে ওষুধ খাওয়াতে যান। ওষুধ খাওয়ার সময় শিশুরা কাঁদতে থাকে। ফলে অনেক সময় গলায় আটকে বমি হয়ে যায়।
• যেসব মাংসপেশি খাবার গিলে ফেলতে সাহায্য করে, শিশুদের সেগুলো সম্পূর্ণ সুগঠিত নয়। ফলে এমনিতেই শিশুদের বমি করার প্রবণতা বেশি থাকে। এটিই শিশুদের ওষুধ খাওয়ানোর পর বমি হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।
ওষুধ খাওয়ানোর পরপরই শিশু বমি করে সেটা ফেলে দিলে আবার ওষুধ খাওয়াতে হবে। তবে ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টি নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন—
• ওষুধটি কতক্ষণ আগে খাওয়ানো হয়েছে
• কী ধরনের ওষুধ
• কী পরিমাণে খাওয়ানো হয়েছে
• শিশুর শারীরিক অবস্থা
• শিশুর বয়স
বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, এসব কারণ বিবেচনা করে একদম সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মা–বাবার জন্য কঠিন হয়ে যায়।
• ওষুধ খাওয়ানোর ১৫ মিনিটের মধ্যে শিশু যদি বমি করে, অথবা বমির সঙ্গে যদি ওষুধ দেখতে পাওয়া যায়, তাহলে আবার নতুন করে ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
• ওষুধ খাওয়ানোর এক ঘণ্টা পরে শিশু বমি করলে আবার ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর আদবকেতা
• তেতো ওষুধ ভাগ ভাগ করে খাওয়ানো যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যে ভাগ করা ওষুধের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান যেন ২ মিনিটের বেশি না থাকে।
• বিভিন্ন খেলনা দিয়ে, গান শুনিয়ে শিশুদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
• ওষুধ জিহ্বার দুই–তৃতীয়াংশ ভেতরে দিলে শিশু সহজেই ওষুধ গিলে ফেলতে পারে।
এরপরও শিশু বেশি বমি করলে বা অভিভাবকের যদি মনে হয় যে শিশু ওষুধ সহ্য করতে পারছে না, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক: ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর