ভালো থাকুন

ঘাড়ব্যথার কারণ যখন ডিস্ক প্রলাপস

সার্ভিক্যাল ডিস্ক প্রলাপস ঘাড়ব্যথার অন্যতম কারণ। ডিস্ক প্রলাপসে ঘাড়ের স্থানচ্যুত ডিস্ক বা কশেরুকার মধ্যকার ছোট হাড়ের টুকরাগুলো স্পাইনাল কর্ড থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভের শাখা-প্রশাখার ওপর চাপ দেয়। এতে ঘাড়ে ব্যথা হয়। দুর্বল দেহভঙ্গি এর একটি বড় ঝুঁকি। এর কারণে ঘাড়ের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। যদি ঘাড়ব্যথার সঙ্গে বাহু কিংবা হাতে অবশ ভাব দেখা দেয় কিংবা হাতের শক্তি কমে যায় অথবা কাঁধ ব্যথা করে, ব্যথা হাতের দিকে নামে, তাহলে অবশ্যই যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। 

কারণ

ঘাড়ব্যথা অনেক কারণে বেড়ে যেতে পারে। মাথা দীর্ঘ সময় এক অবস্থানে রাখলে, যেমন গাড়ি চালালে কিংবা কম্পিউটারে কাজ করলে ঘাড়ব্যথা বাড়তে পারে। ঘাড়ের অতিরিক্ত ব্যবহার, যেমন টানা কয়েক ঘণ্টা কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ঘাড় বাঁকিয়ে ব্যবহার করা, শুয়ে শুয়ে বই পড়া। এতে ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে। অনেক সময় আঘাতের কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়, যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা, ওপর থেকে পড়ে যাওয়া।

 গাড়িতে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে যদি অন্য কোনো গাড়ি আঘাত করে, তাহলে মাথা পেছন দিকে ঝাঁকি খায়, এতে ঘাড়ের নরম টিস্যুগুলোতে টান লাগে ও ব্যথা হয়। 

টানা কয়েক ঘণ্টা স্মার্টফোন ঘাড় বাঁকিয়ে ব্যবহার করা, শুয়ে শুয়ে বই পড়ার কারণে ঘাড়ব্যথা বাড়তে পারে।

করণীয়

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করুন। যখন দাঁড়াবেন কিংবা বসবেন, দুই কাঁধ যেন হিপ (কোমরসন্ধি) বরাবর সোজা থাকে। আর কান দুটি যেন সরাসরি দুই কাঁধের ওপর বরাবর থাকে। মাঝেমধ্যে দাঁড়ানো, হাঁটা ও ঘাড় প্রসারিত করা উচিত। বসার সময় টেবিল, চেয়ার ও কম্পিউটারের সমন্বয় করা; মনিটর চোখ বরাবর রাখা। চেয়ারে হাতল ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোন কান ও কাঁধের মাঝে ঠেসে না রাখা ভালো। ধূমপান ত্যাগ করবেন। কাঁধে ফিতাওয়ালা ব্যাগ বহন না করা ভালো, ব্যাগের ওজনে ঘাড়ে টান পড়ে ও ব্যথা বাড়ে। ঘুমানোর সময় মাথা ও ঘাড় শরীরের একই সারিতে রাখা। ঘাড়ের নিচে ছোট বালিশ ব্যবহার করা, প্রয়োজনে ঊরুর নিচে বালিশ দিয়ে চিত হয়ে ঘুমালে পিঠের মাংসপেশিগুলো চ্যাপ্টা থাকে। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করুন।

চিকিৎসা

ঘাড়ব্যথা ও স্নায়ুর (নার্ভ) ব্যথা কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়। একান্ত ব্যথা না কমলে বিশেষজ্ঞ নিউরোসার্জন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত দেন। ব্যথা উপশমের জন্য সাময়িকভাবে ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন। খুব বেশি ব্যথা থাকলে ব্যায়াম না করাই ভালো।


ডা. হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা