শরীরের যেকোনো জায়গার যক্ষ্মা রক্তের মাধ্যমে পেটে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে।
টিবি বা যক্ষ্মা রোগ এখনো বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান সংক্রামক ব্যাধি। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামের ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ রোগ হয়।
সাধারণের মধ্যে একটা ধারণা আছে—যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসেই হয়। আসলে তা নয়—শরীরের প্রায় সব অঙ্গেই এ রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এমনকি পেটে বা অন্ত্রেও টিবি হতে পারে এবং আমাদের দেশে এ রকম রোগী খুব কম নয়।
ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে কফের সঙ্গে জীবাণু পেটে চলে গিয়ে পেটে যক্ষ্মা হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের যেকোনো জায়গার যক্ষ্মা রক্তের মাধ্যমে পেটে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে।
● যক্ষ্মার কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। যেমন জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, অরুচি। জ্বর সাধারণত অল্প বা মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে। সন্ধ্যা বা রাতের দিকে জ্বর বেশি দেখা যায়। কোনো কোনো রোগীর রাতে প্রচুর ঘাম হতে পারে।
● অন্যান্য উপসর্গ নির্ভর করে যক্ষ্মা কোথায় হয়েছে, তার ওপর। পেটে যক্ষ্মা হলে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি না থাকার আশঙ্কা বেশি। পেটে যক্ষ্মা হলে ভিন্ন কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন পেটে ব্যথা, পেটে চাকা হওয়া, বমি, দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, কখনো পায়খানা আটকে যাওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, পেটে পানি জমা হওয়া, লিভার, প্লীহা ও লিম্ফ গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
● ফুসফুস ছাড়া অন্য জায়গায় যক্ষ্মা হলে তা শনাক্ত করতে অনেক সময় বেগ পেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় রোগীর পরিবারের কারও কাছ থেকে রোগটি ছড়িয়েছে অথবা রোগীর নিজের আগে কখনো এ রোগ হয়েছিল। পেটের যক্ষ্মা নির্ণয়ে রক্তের কিছু পরীক্ষা, এক্স–রে, আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কোপি, কোলনস্কোপির ইত্যাদি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
● পেটে পানি জমা হলে সেখান থেকে কিছু পানি নিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
একটা সময় বলা হতো যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। কথাটা এখন ভুল। সঠিক চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা ভালো হয়।
পেটের যক্ষ্মার ক্ষেত্রে সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস ওষুধ খেতে হয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল
আগামীকাল পড়ুন: ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কৌশল