তারুণ্য ধরে রাখতে ‘হারা হাচি বু’

জাপানিদের গড় আয়ু অন্যদের তুলনায় বেশি। শুধু তা-ই নয়, জাপানিদের দেখলে সহজে তাঁদের বয়স বোঝা যায় না। এই তারুণ্যের রহস্য কী? জাপানিদের কিছু অভ্যাস তাঁদের দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক জাপানিদের তারুণ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক আটটি অভ্যাস সম্পর্কে।

জাপানিরা ত্বকের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন
ছবি: পেক্সেলস

১. ‘হারা হাচি বু’

খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে জাপানিরা ‘হারা হাচি বু’ নীতি মেনে চলেন। অর্থাৎ তাঁরা কখনোই উদরপূর্তি করে খাবার খান না। পেটের অন্তত এক-চতুর্থাংশ জায়গা খালি রাখেন। এতে মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। মুটিয়ে যাওয়া থেকেই বার্ধক্যের অনেক সমস্যার শুরু হয়। তাই পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করে মুটিয়ে যাওয়া রোধ করার মাধ্যমে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হন জাপানিরা। এ ছাড়া পরিমিত খাদ্য গ্রহণের ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়।

২. গ্রিন টি

জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে সবুজ চা বা গ্রিন টি খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ওরা পানির মতোই গ্রিন টি আর বিভিন্ন হারবাল চা পান করে। গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যাটেচিন নামক একধরনের যৌগ। এই যৌগটি শরীরের কোষ সুরক্ষিত রেখে দীর্ঘস্থায়ী রোগবালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করে। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বক ও শরীর সুস্থ থাকে।

ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ

৩. খাদ্যাভ্যাস

জাপানিদের খাদ্যাভ্যাস খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। জাপানিদের খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চিনি নেই বললেই চলে। তাঁদের রোজকার খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাকসবজি, সি ফুড, সয়াজাত খাদ্য ও ভাত থাকে। এই খাবারগুলোয় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। বুড়িয়ে যাওয়ার দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এই দুই প্রক্রিয়াকেই বাধাগ্রস্ত করে।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম

ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাঁটা, সাইকেল চালানো, ‘তাই চি’ কিংবা মার্শাল আর্টের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায় অংশ নেওয়া জাপানিদের জন্য রোজকার ব্যাপার। ঘন ঘন ব্যায়াম করলে শরীরের পেশিগুলো সুস্থ থাকে, হৃদ্‌যন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে, মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

৫. ত্বকের যত্ন

জাপানিরা ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন। বিভিন্নভাবে তাঁরা ত্বকের যত্ন–আত্তি করে থাকেন। ত্বককে হাইড্রেটেড রাখা, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেওয়া, নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা ইত্যাদি। জাপানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বকের পরিচর্যা করার প্রচলন রয়েছে, যেমন সামুদ্রিক আগাছা (সি–উইড), গ্রিন টি, রাইস ব্রান ইত্যাদি। তারুণ্যদীপ্ত ও সুস্থ ত্বকের জন্য এই উপাদানগুলো খুবই উপকারী।

৬. পর্যাপ্ত পানি পান

তারুণ্য ধরে রাখার একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। প্রতিদিনের খাবারে প্রচুর ফল ও সবজি গ্রহণের পাশাপাশি জাপানিরা সারা দিন প্রচুর পানি পান করেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে, শরীর থেকে অনেক ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়।

৭. ‘শিনরিন ইয়োকু’

অবসাদ কমাতে জাপানিদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে মননশীলতার চর্চা, ধ্যান ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। মানুষের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক অবসাদ।

অবসাদ কাটাতে জাপানিরা প্রায়ই ‘শিনরিন ইয়োকু’ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। ‘শিনরিন ইয়োকু’ হচ্ছে জঙ্গলে গিয়ে গাছপালা পরিবেষ্টিত শান্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজের চারপাশ পর্যবেক্ষণ এবং সেখানকার নির্মল বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার একটি স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া। ‘শিনরিন ইয়োকু’ এবং এ ধরনের অন্যান্য কার্যক্রম মানসিক অবসাদ কাটাতে ও সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। আমাদের দেশেও এ ধরনের অনেক কার্যক্রম চালু হয়েছে।

৮. সামাজিক বন্ধন

জাপানের সংস্কৃতিতে সামাজিক বন্ধন ও এলাকার বিভিন্ন কার্যক্রমে সবার অংশগ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানুষের দীর্ঘায়ু ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সামাজিক কার্যক্রমে ব্যক্তির অংশগ্রহণের বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত।

একজন মানুষ যখন বুঝতে পারেন সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাঁকে আপন ভাবার মানুষ আছে, তখন বিষয়টি তাঁর স্বাস্থ্যের ওপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুখ-দুঃখে নিজের এলাকার মানুষদের যাঁরা পাশে পান, তাঁরা সহজেই অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেন। জীবনের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি হয় ইতিবাচক।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া